ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর ছাত্রদের বিপ্লরের উপহার হিসেবে প্রথম নির্বাচনের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই নির্বাচন ঘিরে ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা। অবশেষে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আজ ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।
গত ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে শুরু করেন। এ প্রক্রিয়া কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা বাড়তে থাকে। পদপ্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এবারে মোট ২৮টি পদে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থিতা দিয়ে চমক দেখায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বাগছাস)।
জুলাই আন্দোলনের সামনে থাকা নিয়মিত ছাত্রকে ভিপি প্রার্থী করে চমক দেখায় ছাত্রদল। সংগঠনটি শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র ও জুলাইয়ে মাঠে থাকা আবিদুর রহমান আবিদকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এরপর থেকে চমক দেখাতে থাকে ছাত্রদল। নির্বাচনী প্রচারেও স্বতন্ত্র ও বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে নিজের অবস্থান প্রমাণ করেছেন।
অন্যদিকে চমক দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকা ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে প্যানেলে ভিপি হিসেবে জুলাই আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক ও নেপথ্যের যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত সাদিক কাইয়ুমকে ভিপি হিসেবে মনোনয়ন দেয়। প্যানেলে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো একমাত্র শিক্ষার্থীদেরও প্রার্থী করে আরেকটি চমক দেখায় সংগঠনটি।
নির্বাচনী তপশিল হলেও আদৌ নির্বাচন হবে কি না—এমন গুঞ্জনের মধ্যে উচ্চ আদালতে দায়ের হওয়া রিট সবার মধ্যে উদ্বেগ বাড়ায়। তবে আদালত রিট খারিজ করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশা সৃষ্টি হয়। নতুন করে রিট করলেও উচ্চ আদালত সেটি শোনেননি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় ২৫ আগস্ট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর। প্রার্থীরা তাদের প্যানেল পরিচিতি, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
গত ২৫ আগস্ট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পর আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রার্থীরা প্যানেল পরিচিতি, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
এদিকে নির্বাচন কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে। তারা আশা করছেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
মন্তব্য করুন