

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। তারেক রহমান কবে ফিরবেন, সেটা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অধীর আগ্রহ রয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি এখন অনেকটা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিলের পরপরই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে কিংবা স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হলে তপশিলের আগেও ফিরতে পারেন তিনি। যদিও তার ফেরার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগির দেশে ফিরবেন তিনি (তারেক রহমান)।’ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত একটি দোয়া মাহফিলেও একই কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তারেক রহমান। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকেই ভার্চুয়ালি দল পরিচালনা করছেন তিনি। ওয়ান ইলেভেন সরকার এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শখানেক মামলা করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় তার সাজাও হয়েছিল। অবশ্য বিএনপি নেতাদের দাবি, এসব মামলা করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে, যার সব অভিযোগই ছিল সাজানো।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালত থেকে একে একে সব মামলা থেকে মুক্ত হন তারেক রহমান। ফলে তার দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। জানা যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের সিদ্ধান্ত ছিল, নির্বাচনের সময়ই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।
গত ৩ নভেম্বর ঘোষিত দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তারেক রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, সে আলোচনা সম্প্রতি তুঙ্গে রয়েছে। এর আগে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, নভেম্বরে তিনি দেশে ফিরবেন। এর মধ্যে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়।
এ অবস্থায় গত শনিবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অবারিত ও তার একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ এ ধরনের ফেসবুক পোস্টের পর এটা নিয়ে ফের নতুন করে আলোচনা শুরু হয়—তাহলে সেই নিয়ন্ত্রণ কার হাতে বা বাধা কোথায় অথবা নিরাপত্তার কোনো সমস্যা আছে কি না? বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলছেন, তারেক রহমান চাইলেই যে ফিরতে পারেন না, ওই ফেসবুক পোস্টের মধ্য দিয়ে মূলত সে বিষয়টিই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের পর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সহযোগিতার আশ্বাসও আসে একাধিক উপদেষ্টার কণ্ঠে। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর তারেক রহমানের নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কারও কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি বা শঙ্কা নেই। সরকার সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
এদিকে গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বের হয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগির লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ। তবে ঠিক কবে ফিরবেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি তিনি।
সালাহউদ্দিনের এ বক্তব্যের পর তারেক রহমান দু-একদিনের মধ্যেই দেশে ফিরছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তার দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি। দেশে ফিরতে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এখনো ট্রাভেল পাসও চাওয়া হয়নি। গতকাল সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সরকারের কাছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এখনো তিনি ট্রাভেল পাসই চাননি। চাওয়ামাত্র তার জন্য পাস ইস্যু করা হবে।
জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান। সেটা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহেও হতে পারে। বিএনপির মিডিয়া সেলের এক সদস্য এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি অনেকটা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করছে। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে। ট্রাভেল করার মতো পর্যায়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনের তপশিলের পর দেশে ফিরবেন। আর ম্যাডামের স্বাস্থ্যের যদি অবনতি হয়, তাহলে তপশিলের আগেও তারেক রহমান ফিরতে পারেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কিছু মানুষ অতিআগ্রহ প্রকাশ করছে, এটার তো দরকার নেই। কবে আসবেন, এটা তার পারিবারিক ও একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। ম্যাডাম অসুস্থ। সুতরাং সব মিলিয়ে তারা যেটা করবেন, সেটা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গতকাল রাষ্ট্রের ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার পর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা দেওয়াও শুরু করেছে। জানা গেছে, তারেক রহমানের ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে সরকারের কাছে তার নিরাপত্তাও চাওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, এরই মধ্যে সরকার খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য ফরমালি এখনো চাওয়া হয়নি, চাওয়া হবে। আশা করছি হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন