বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তা এদেশের জনগণ, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম নির্ধারণ করবে। কোনো রাজনৈতিক দল বর্জন করলে বা ভোটারের কম উপস্থিতির কারণে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হয় না। তবে প্রধান বিরোধী দল এলে নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হতো। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা গতকাল সোমবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত তিনটি পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে বিদেশি পর্যবেক্ষক দলগুলো কোনো অনিয়ম দেখেনি জানিয়ে বলেছে, নির্বাচনের আগে ও ভোট গ্রহণ চলাকালে বেশ কিছু সহিংসতা সত্ত্বেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হয়েছে। ভোটে নারী ও তৃতীয় লিঙ্গসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। ভবিষ্যতের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন পর্যবেক্ষকরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকাল সাড়ে ১১টায় প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইসলে ও আমেরিকার দ্য হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) চিফ অব স্টাফ আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে এই পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দেন।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় একই ভেন্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, থাইল্যান্ড, ইরাক, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপ এই ৯টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত পর্যবেক্ষক দলের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দল থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্য সৈয়দ আলী জহির মাওলানা ও কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। এ ছাড়া দুপুর ২টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাবেক সংসদ সদস্য পাওলো কাসাকা। তার সঙ্গে ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর উইলেম ভ্যান ডার গেস্তা এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক জ্যাকসন।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো সহিংসতা যেন না হয়—আশা প্রকাশ করে উইলেম ভ্যান বলেন, নির্বাচন কোনো খেলা নয়। এখানে বর্জন খুব বেমানান। আর বর্জন মানেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, এ ধারণাও সঠিক নয়।
পাওলো কাসাকা বলেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি নিজেকে খেলার বাইরে নিয়ে গেছে। একই ভুল আগামীতে দলটি করবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলাম। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তাই কম ভোটারদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
মার্ক জ্যাকসন বলেন, জ্বলন্ত ট্রেনের খবর জেনে ভেবেছিলাম ভোটের দিন এরকম কিছু সহিংসতা হবে। শঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। নিয়ম মেনে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জন্য প্রত্যাশিত।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কতটা অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য সেই বিচার বাংলাদেশের জনগণ করবে মন্তব্য করে স্নেহাশিস সুর বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এসে কয়েকটি বুথে গিয়ে এত বড় বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের আসার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা পৃথিবী পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমের মাধ্যমে একটা বার্তা পেয়েছে।’
সৈয়দ আলী জহির মাওলানা জানান, তারা ঢাকার ৩০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। সেখানে যথেষ্ট ভোটার উপস্থিতি ছিল। কিছু রাজনৈতিক দল ভোটে অংশ না নিলেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ পাওয়া গেছে। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ উৎসাহিত করেন। তবে সব রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে বলেন, ‘এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দলগুলো ভোটারদের কোনো ভয়ভীতি দেখায়নি। এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য শুভ লক্ষণ। তবে আমরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শুনেছি। সরকারি দলের প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা অপ্রত্যাশিত। কিন্তু সামগ্রিক নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে সেসব ঘটনা খুবই নগণ্য।’ জিম বেটস বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের ভোট হয়েছে।