শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সানাউল হক সানী
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫২ এএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গণপূর্তে ১৬৯ পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফল গায়েব

জিডিতেই দায় এড়ানোর চেষ্টা
গণপূর্তে ১৬৯ পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফল গায়েব

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের ৬টি ক্যাটাগরির ১৬৯টি শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফল গায়েব হয়ে গেছে। গত বছরের ২০ এবং ২৭ মে এসব পদে জনবল নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা চলে ১৪ জুন থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে পারেনি গণপূর্ত অধিদপ্তর। কারণ ওই নিয়োগ পরীক্ষার ফলের একাংশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আনুষ্ঠানিক একটি পরীক্ষার ফল গায়েবের মতো

ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন বা দায়ীদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেই দায় এড়াতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিয়োগ-সংক্রান্ত নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ২৭ এপ্রিল ১৬৯টি শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে অফিস সহায়ক ১১৭ জন, সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান ৫ জন, পাম্প হেলপার ২ জন, ইলেকট্রিক হেলপার ৭ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৩০ জন এবং মালি ৮ জন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন। এরপর ২০ মে এবং ২৭ মে লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ টাইপ) অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ জুন শুরু হয়ে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলে উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মো. শহিদুল আলম ফলাফল সংরক্ষণ করেন। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। সেখান থেকেই বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশীর চূড়ান্ত ফল গায়েব হয়ে যায়। নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্যরা জানার পর ফল গায়েবের বিষয়টি আলোচনায় আসে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ফলাফল সাধারণত সিলগালা করে ট্রাঙ্কে তালা মেরে নির্দিষ্ট কক্ষে সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া এসব শিট অন্য কারও দেখার সুযোগ নেই। এমনকি এগুলো কোথায় রাখা হয়, তাও কারও জানার কথা নয়। এর পরও চাকরিপ্রত্যাশীদের ফল গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক। নিয়োগ পরীক্ষার ফল ইচ্ছাকৃতভাবে সরিয়ে ফেলা না হলে হারিয়ে যাওয়ার কথা নয়।

তবে গুরুতর এই ঘটনা নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তেমন মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। পরে বিষয়টি কমিটির অন্য সদস্যদের নজরে এলে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করিয়েই দায় সারেন তারা। জিডিটি করেছেন গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান।

সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, ‘বিভাগীয় বাছাই, নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) কর্তৃক মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পর মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্রের সিলগালাকৃত খামসমূহ কমিটির সভাপতি, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সওস)-এর কক্ষে তালাবদ্ধ ট্রাঙ্ক এ সংরক্ষিত ছিল। গত ২৮ নভেম্বর ডিপিসি কর্তৃক অফিস সহায়ক পদের নম্বরপত্রের সিলগালাকৃত খামসমূহ খুলে কম্পিউটারে নম্বর এন্ট্রি করার সময় মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্রের সিলগালাকৃত ১৫টি খামের মধ্যে ১৪টি খাম পাওয়া যায়। সিলগালাকৃত ১৫টি খামের মধ্যে ১ অক্টোবর তারিখে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষার সিলগালাকৃত খামটি পাওয়া যায়নি।’

সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘গত ডিসেম্বর মাসে আমি প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ছিলাম। বর্তমানে আমাকে শেরেবাংলানগর গণপূর্ত বিভাগে বদলি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে গত ৫ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষার সিলগালাকৃত একটি খাম খুঁজে না পাওয়ায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তারা রয়েছেন। নিয়োগ কমিটির পরামর্শক্রমে নিয়োগ সম্পন্ন হয়। এ বিষয়ে ওপর থেকে দেখা ছাড়া আমাদের তেমন কিছু করণীয় নেই।’

বিস্তারিত জানতে প্রয়োজনে নিয়োগ কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

নিয়োগ কমিটির সভাপতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) মো. শহীদুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্পর্শকাতর ও গোপনীয় বিষয়। তাই সব কথা এখন বলা যাবে না। মাস খানেকের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। বিভাগীয় বাছাই, নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সিদ্ধান্তে স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

মৌখিক পরীক্ষার ফলের সিলগালা করা খাম হারানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি কেন এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? নিয়োগ পরীক্ষার মতো গোপনীয় বিষয়ে আপনাদের এত আগ্রহ কেন?’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। সিলগালা করা একটি খাম খুঁজে না পাওয়ায় ২৯ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া হবে। এরপর ফল প্রকাশ করা হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরাকের সরকার গঠনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনকে শান্তি পরিকল্পনা মানতে হবে: ট্রাম্প

ভেড়ামারায় দুর্বৃত্তের গুলিতে গরু ব্যবসায়ী নিহত

রুয়েট প্রাক্তন ছাত্রদল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি তুষার, সম্পাদক হাবীব

ভূমিকম্পে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৪১ জন আহত

ক্যারিয়ার শেষে কত উইকেট চান জানালেন তাইজুল

 ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে রাজউকের তাৎক্ষণিক পরিদর্শন

মেসিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন ফ্লিক

গৌহাটি টেস্টের আগে ভারত শিবিরে দুঃসংবাদ

১০

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১১

এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না : শিবির সভাপতি

১২

নাটকীয় জয়ের পরও নিজের ভুলে হতবাক আকবর

১৩

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধান উপদেষ্টা

১৪

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ 

১৫

ভূমিকম্পে ছেলের পর এবার চিকিৎসাধীন বাবার মৃত্যু

১৬

তারেক রহমানের জন্মদিনে ৫ হাজার মানুষকে উপহার দিলেন যুবদল নেতা

১৭

জামায়াতের নাড়িপোতা পাকিস্তানে : মাহমুদ হাসান 

১৮

ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান গণসংহতির

১৯

তারেক রহমান : ইতিহাসের অগ্নিপথ পেরিয়ে জাতির প্রত্যাশার শিখরে

২০
X