ওয়াহিদ রুবেল, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩, ০২:২৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রত্যাবাসন ইস্যু এলেই খুন বাড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। পুরনো ছবি
রোহিঙ্গা ক্যাম্প। পুরনো ছবি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানে গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার পৌঁছায় আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ সময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির সদস্যরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলির ক্যাম্প পরিদর্শনের দিনই খুন হন এবাদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা নেতা। পরদিন শুক্রবার ভোরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ আরসা সদস্য নিহত হন। ওই দিন বিকেলে আরও এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেন এপিবিএন সদস্যরা। এসব ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কিংবা মিয়ানমারবিরোধী কোনো ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা কিংবা কোনো প্রতিনিধিদল ক্যাম্প পরিদর্শনে এলেই কেন এ খুনোখুনির ঘটনা ঘটে।

সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারই এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। কথিত আরসাকে দিয়ে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত করাতে এমন কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা করছে তারা। যেন সাধারণ রোহিঙ্গাদের মনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে। গ্রুপগুলোর মধ্যে আরসাসহ কয়েকটি গ্রুপ মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে কাজ করছে। বর্তমানে ক্যাম্পে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পে শান্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে শুক্রবার ভোরে গোলাগুলিতে ৫ আরসা সদস্য হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে এপিবিএন সদস্যরা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরেই ৪৯ জন হত্যার শিকার হন। যার মধ্যে ৩২ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় জড়িত নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এ ছাড়া গত এক বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৩০ লাখের বেশি ইয়াবা, ৩০ কেজি আইসসহ ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। আর এই মাদকের জের ধরে ১৩৬ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ১৮ মামলায় ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

৫ রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মো. আলী। তিনি বলেন, কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা বলা মুশকিল। তবে আধিপত্য বিস্তার কিংবা মদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটছে। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যেভাবে ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরি করছে, এর প্রভাবে শুধু রোহিঙ্গারা নয়; স্থানীয়রাও আতঙ্কে রয়েছেন। আমরা চাই সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্বে যেসব অপরাধী আছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বলছে, ক্যাম্পে সক্রিয় থাকা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র কয়েকটি গোষ্ঠী এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের লোকজন ক্যাম্পে আসার পরই যে ঘটনাটি ঘটেছে, এটা দেখে মনে হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এসব ঘটনা পরিকল্পিত এবং টার্গেট কিলিং। রোহিঙ্গা যে উচ্ছৃঙ্খল, তা প্রমাণের চেষ্টা করা হয় এসব ঘটনার মাধ্যমে। এটা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ পরিকল্পনা ও অভিযান, অস্ত্রের উৎস বের করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে স্বীকার করে ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, মাদক কারবার, হাটবাজারে চাঁদাবাজি ও অপহরণ করে অবৈধ অর্থ অর্জনে প্রভাব বিস্তার করতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরা করে গোয়েন্দা তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে অনেক ক্যাম্প পাহাড়ে ও টিলার ওপরে হওয়ায় এসব এলাকায় সহজে যাওয়া যায় না। ফলে সন্ত্রাসীরা সহজে পালিয়ে যায়। তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে এপিবিএন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তেরোখাদায় পারভেজ মল্লিকের রাজনৈতিক কার্যালয় উদ্বোধন

দাঁত ব্রাশ করার পরও মুখে দুর্গন্ধ? চিন্তা নেই, রইল সহজ ৬ সমাধান

৪ নারীকে ধর্ষণসহ ৩২ অভিযোগে ক্রাউন প্রিন্সেসের ছেলের বিচার শুরু

বিএনপির দলীয় কার্যালয় ফিরে পেতে ১৬ বছর পর মামলা

১৩ ঘণ্টা পর ভেসে উঠল নাজিমের নিথর দেহ

দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

জুটি বাঁধছেন মিঠুন-রজনীকান্ত

বাংলাদেশ বিমানের ১০টি চাকা চুরি!

পশ্চিম দিকে থুথু ফেলা কি জায়েজ আছে?

নিজ বাসভবনে হামলার শিকার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী

১০

ই-কারের ভাড়া ৫ টাকা করার দাবি চবি ছাত্রশিবিরের

১১

কেশবপুরে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত 

১২

বিশ্বসুন্দরী মঞ্চে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি নাহিন আইয়ুব

১৩

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তুষার নিখোঁজ

১৪

নীরবে শরীরে যে ৭ ক্ষতি করছে ইউরিক অ্যাসিড

১৫

ডুবুরিদের ৩ ঘণ্টার চেষ্টাতেও সন্ধান মেলেনি শিশু নাজিমের

১৬

ভাত ছেড়ে দিলেই কি ওজন কমবে? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১৭

কানাডা মাতাতে যাচ্ছেন জায়েদ খান

১৮

মৃত্যুর কারণ চিরকুটে লিখে গেলেন নাসরিন

১৯

সড়কে মিলল ৬ পুরুষের কাটা মাথা, দেহ গায়েব

২০
X