কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৭ এএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পাকিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে জটিল সমীকরণ

জাতীয় নির্বাচন
পাকিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে জটিল সমীকরণ

পাকিস্তানে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ১৩৪টি পেতে হয়। কিন্তু কোনো দলই এ ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে না পারায় দলগুলোকে এখন জোট গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। সে কাজটিও বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। জিও নিউজের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় গত রাত ১২টা পর্যন্ত ২৫১টি আসনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়, তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছে। নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭০ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫১টি আসন। অন্য দলগুলো পেয়েছে ২৯টি আসন। বাকি রয়েছে ১৪টি আসনের ফল। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। নির্বাচনে একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজয় দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ইতোমধ্যে তিনি সরকার গঠনের জন্য অন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। আর পিটিআই সমর্থিত বিজয়ী সদস্যরা আজ ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলমত নির্বিশেষে সরকার গঠন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তারা অন্য কোনো দলে যোগদান এড়িয়ে সংসদে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবেন। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পেলে তারা সরকার গঠন করতে পারবেন। এ জন্য তাদের ২৬৬ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। যেহেতু ম্যাজিক ফিগারে যেতে পারেননি তারা, সেহেতু পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীদের সামনে আরেকটি বিকল্প রয়েছে। সেটা হলো, তাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন করে সরকারে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে সরকার গঠন করলেও তেমন লাভজনক হতো না। এককভাবে সরকার গঠন করে ফেললেও তাদের আরেকটি বড় লোকসান হতো। তারা সংরক্ষিত আসনের কোটা অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। এভাবে সরকার গঠন করলে সেটা হতো খুব দুর্বল। স্বতন্ত্র নেতাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে সরকার চালাতে হতো। যে কোনো সময়ই এই ধরনের সরকারের পতন হতে পারে। পাকিস্তানে সংসদের ২৬৬টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। এসব আসন থেকে সংসদ সদস্যরা ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর অতিরিক্ত ৬০টি আসন নারী এবং ১০টি আসন সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেসব দল সরকার গঠন করে, তাদের সরাসরি আসনের অনুপাতে এগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়।

ইসলামাবাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ বলেন, স্বতন্ত্ররা তাদের মনমতো দলে যোগ দেওয়ার জন্য সময় পাবেন তিন দিন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্ররা সেই দলেই যোগ দেবেন, যার প্রতীক তাদের নিবন্ধনের সময় দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কার্যকর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দলটির নেতা ইমরান খান জেলে আছেন, সে কারণে দলটির অনুসারীদের অন্য একটি রাজনৈতিক দলেই যোগ দিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পিপিপি এবং পিএমএল-এন—দুই দলই স্বতন্ত্রদের তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাবে। রফিউল্লাহ বলেন, এ পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্রদের জন্য দুটি বিকল্প সামনে আছে। হয় বিলাওয়ালের পিপিপির সঙ্গে জোট গড়া, না হয় আরেকটি ছোট পার্টি গড়া। তিনি বলেন, জনগণের এই রায় পূর্ণ নয়। কোনো দলেরই সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই এখন তাদের একটি জোট গড়া কিংবা অস্তিত্ব টেকাতে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। তারপর একটি জোট সরকার গঠন করতে হবে। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয় দাবি করে তিনি গত সন্ধ্যায় লাহোরে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণে বলেন, তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠন করতে চান। বিজয়ী ভাষণ হিসেবে দাবি করা বক্তব্যে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘শাহবাজ শরিফকে দায়িত্ব দিয়েছি ফজলুর রহমান, খালিদ মকবুল সিদ্দিকী ও আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।’ তিনি বলেন, ভোটের পর পিএমএল-এন দেশের একক বৃহত্তম দল। দেশকে সংকট থেকে উত্তরণের দায়িত্ব আমাদের দলের। আমাদের একমাত্র এজেন্ডা সমৃদ্ধ পাকিস্তান। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন যে তার দল পিএমএল-এন এককভাবে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনে জয়ী হতে পারেনি। জোট সরকার গঠনে অন্য দলগুলোকে তিনি আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি চান পাকিস্তানকে পাল্টে দিতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে সম্প্রীতির আলোকে বসতে।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়। আগে ধারণা করা হয়েছিল, ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম বেসরকারি ফল পাওয়া যাবে, আর শুক্রবারের সকালের মধ্যে ফলাফলের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তেমনটি হয়নি। ফল প্রকাশে যে বিলম্ব ঘটছে, তাকে অস্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষকরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাছ ধরার নৌকায় মিলল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা, আটক ৯

ভোলায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল / এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

যৌথবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের ২ সদস্য আটক

জেলেরা হেলমেট পরে মাছ ধরেন যেখানে

বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

১০

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

১১

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১২

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

১৩

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

১৪

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

১৫

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

১৬

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

১৭

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১৮

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১৯

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

২০
X