সরকার পতনে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকছে না দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। একই পথে হাঁটছে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা সব দলই। তবে নতুন কোনো ঘোষণা না দিয়ে ১০ দফা দাবিতে এর আগে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির একদফার দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করেছি। আগামী ১৫ জুলাই সিলেটে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর অন্যান্য বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচি শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, ‘বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। সুতরাং জামায়াতের নতুন কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসবে না ।’
১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট গঠিত হয়। পরে তা ২০-দলীয় জোটে রূপান্তর হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট বিজয়ী হয়। জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ জোট সরকারের মন্ত্রিত্ব পান।
জামায়াত নেতারা জানান, ‘ওই সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কোনো সংবাদ সম্মেলন করলে জামায়াতের আমির বা শীর্ষ কোনো নেতাকে পাশে বসাতেন। এমনকি তিনি জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করতেন; কিন্তু আজকে সময়ের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আসলে বিএনপির ভেতরেই সন্দেহ ও অবিশ্বাস রয়েছে। তারা এখন প্রকাশ্যে কোনো জোট বা যোগাযোগ রাখেন না। তবে মনে মনে চায় জামায়াত তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকুক।’
জানা যায়, সরকারবিরোধী চলমান যুগপৎ আন্দোলন সামনে রেখে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর ২০দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। অবশ্য গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ওই জোটের ১২টি দলের সমন্বয়ে ‘১২দলীয় জোট’ এবং ২৮ ডিসেম্বর আরও ১১টি দল মিলে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠিত হয়। তাতেও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। যুগপৎ আন্দোলনের শুরুতেও পৃথক কর্মসূচি পালন করে জামায়াত। তবে এক পর্যায়ে এই প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
জামায়াতের একাধিক নেতা কালবেলাকে জানান, ‘বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি ‘ক্ষোভ’ এবং ‘অভিমান’ থেকেই এই অবস্থার সূত্রপাত। কেননা সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি অন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করলেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। এরপরও অনেকটা আগ বাড়িয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গত বছরের ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে অংশ নেয় জামায়াত। এর আগে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর যুগপতের গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও আহত হয়েছেন। এ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতা বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। এমনকি যুগপতের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি। এ বিষয়ে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। কার্যত এরপরই জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে।’
নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হুমকিস্বরূপ
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট থেকে দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট থেকে দেশের কোটি কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর, দুঃখজনক এবং দেশের মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’
তিনি বলেন, জাতির কাছে আজ বিরাট প্রশ্ন যে, সরকারি ওয়েবসাইট থেকে যদি এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকল কোথায়? একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেমন তার ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে দেবেন, ঠিক তেমনি একজন নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।’
তিনি অবিলম্বে দেশের নাগকিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন