শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১১ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভোটমুখী নেতাদের যে কারণে ঠেকাতে পারছে না বিএনপি

উপজেলা নির্বাচন
ভোটমুখী নেতাদের যে কারণে ঠেকাতে পারছে না বিএনপি

সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ শাস্তির বার্তা দিয়েও উপজেলা নির্বাচনে ভোটমুখী নেতাকর্মীদের ঠেকাতে পারছে না বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগসহ দলীয় নানা উদ্যোগও অনেককে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারছে না। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে শুধু চেয়ারম্যান পদেই ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৮ নেতা। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ভোট করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদেও লড়ছেন বিএনপি সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয়ভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে সব রকম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা থাকলেও ব্যক্তিগত ইমেজ, পারিবারিক ধারা, আঞ্চলিকতার হিসাব-নিকাশ, এলাকায় অবস্থান দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা, দীর্ঘদিনের জনবিচ্ছিন্নতা কাটানোসহ নানা বিবেচনায় অনেককেই উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই প্রার্থীরা।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ক্ষমতাসীন দলের চাপ ও ফাঁদে পড়ে দলের কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচন করবেন, শিগগির তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত রোববার পটুয়াখালী ও কক্সবাজারের দুই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের প্রতি কঠোর বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা জানান, এমনিতেই টানা প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত লম্বা সময় কখনোই ক্ষমতাহীন থাকেনি দলটি। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ও নির্বাচনের বাইরে থাকলেও স্থানীয়ভাবে বিএনপির অনেক নেতা প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অনেকের পূর্বপুরুষ কিংবা পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘকাল নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তারা নির্বাচন করছেন।

তারা আরও জানান, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। রাজনৈতিক কারণে আপাতত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনও ধারাবাহিকভাবে বর্জন করতে থাকলে তৃণমূলে দলীয় নেতাদের প্রভাব কমে যাবে। এতে ব্যক্তির পাশাপাশি দলও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এবার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় সবার জন্যই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় বিএনপি ঘরানার প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনাও বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিয়ে কৌশল হিসেবে নীরব থাকলে বিএনপি লাভবান হতো বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় উপজেলা নির্বাচন না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর দলটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নানাভাবে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এজন্য দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা তৃণমূলে যোগাযোগও বাড়িয়ে দেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এবং নেতাদের সব অনুরোধ উপেক্ষা করে অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল মঙ্গলবার কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেজন্যই এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও যারা প্রার্থী হয়েছেন বা হচ্ছেন, বুঝতে হবে তারা দলের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী নন। পাশাপাশি তারা ক্ষমতাসীন দলের কোনো প্রলোভনে এবং ফাঁদে পা দিয়েছেন। বিষয়টি কিন্তু দলের নীতিনির্ধারকরা অবগত আছেন।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৮ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জন দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ পদধারী নেতা। ১১ জন দল থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত কিংবা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক নেতা। এ ছাড়া বাকি ৯ জন বিএনপি নেতাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা এলাকায় বিএনপির লোক হিসেবে পরিচিত।

উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ও নির্বাচনের পক্ষে থাকা নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিরতি যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি নেই। এখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। আর উপজেলা নির্বাচন করলে হয়তো নেতাকর্মীরা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন। কেননা জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। স্থানীয় কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা রক্ষা করতে হলেও নির্বাচন করতে হয়। আর নির্বাচন না করলে তৃণমূলে নেতাদের কোনো প্রভাব থাকে না।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিএনপির আহ্বায়ক রমিজ উদ্দীন (লন্ডনি) গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘আমি জেনে-বুঝেই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। রাজনীতি করতে করতে বুড়ো হয়ে গেছি। আমার এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। ১৮ বছর ধরে বিএনপি নির্বাচন করে না। আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমরা নির্বাচনে না গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীকে কীভাবে ধরে রাখব? চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হলে তো নেতাকর্মীরা কিছুটা সুবিধা ও স্বস্তি পাবেন। তাদের স্বার্থেই নির্বাচন করছি। আমি জয়ী হলে তাদের জন্য হবে বিরাট সান্ত্বনা।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এলাকার জনগণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। বিজয়ী হয়ে তাদের আশা পূরণ করব।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে নেতাকর্মীরা দলছাড়া হয়ে পড়ে। আশা করি, দল পরিস্থিতি বুঝে আমাদের বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও রাজশাহীর কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলেও এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে নানা ধরনের নাগরিক সুবিধার জন্য যেতেই হয়। জন্ম বা মৃত্যু সনদসহ স্থানীয় পর্যায়ের অনেক প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার যুক্তি নেই। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জন করলেও স্বতন্ত্রভাবে কেউ অংশ নিয়ে জয়ী হলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা লাভবান হবেন।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান ও ময়দান দিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আল আমিন।

যোগাযোগ করা হলে আব্দুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, ‘স্থানীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শেই স্বতন্ত্রভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। দল কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা দলের বিষয়।’

ফেরদৌস আল আমিন বলেন, ‘আমি বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এখানে ক্ষমতাসীন দলের ৪ জনসহ মোট ৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আসলেই কি পিসিবির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন পাইক্রফট?

কুমিল্লায় ফের বাড়ছে স্ক্যাবিসের সংক্রমণ

গার্দিওলার চোখে ইতিহাসের সেরা কোচ কে?

সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শিল্প গ্রুপের দুই কর্মকর্তা গ্রেপ্তার 

আজ প্রথম প্রেম মনে করার দিন

এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পিটিশনে সই করল হাজারো ইসরায়েলি

কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া হয়েছে

চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা

নিখোঁজের এক মাস পর শ্বশুরবাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মিলল জামাইয়ের লাশ

শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

১০

টানা ৫ দিন বৃষ্টি ঝরতে পারে যেসব অঞ্চলে

১১

বাকৃবিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস

১২

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

১৩

বিয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে এসে খুন হলেন নারী 

১৪

পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

১৫

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

১৬

মেন্টরস' স্টাডি অ্যাব্রোডের আয়োজনে ‘স্টাডি ইন দ্য ইউকে অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড ওপেন ডে’

১৭

পাকা চুল বা দাড়ি তুলে ফেলা কি জায়েজ?

১৮

শেখ হাসিনাসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তি চাইলেন নাহিদ

১৯

পূর্বপুরুষের হস্তান্তর করা জমি দাবি করে আরেক জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ

২০
X