দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে চলছে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি। নির্বাচনবিরোধী কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে কর্মিসভাও করছে দলটি। আজ বুধবার প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে থেকে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধ করবেন। তবে কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ কিংবা নির্বাচন প্রতিরোধের চিন্তা করা হচ্ছে না। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলার ভোটও বর্জন করবে বলে আশা করছেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছি। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বর্জনের পথেই থাকব। জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে আমরা এরই মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণ করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় নির্বাচনের মতো জনগণ এই ভোটও বর্জন করবে।’
এদিকে দলীয়ভাবে বর্জনের ঘোষণা সত্ত্বেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপে ৩৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে ভোট করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ জন্য এরই মধ্যে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের ৭৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হতে নেতাকর্মীদের বার বার সতর্ক করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রথম ধাপের এই ভোটে দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান কী হয়—তা কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা মাঠে থাকবে অথবা ভোটে থাকা প্রার্থীদের পক্ষ হয়ে যারা কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিএনপির অনেক নেতার ধারণা, কেন্দ্র থেকে কড়া সতর্কতার পরও বহিষ্কৃত অনেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত হতে পারে, বিশেষ করে ভোটের দিন তারা নির্বাচনী এজেন্ট হওয়াসহ প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে কাজ করতে পারেন।
বিএনপির দাবি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলার তপশিল ঘোষণার পর থেকে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে দলটি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, কর্মিসভা, লিফলেট বিতরণ করেছে। এবারও ভোটাররা সাড়া দেবে বলে বিএনপির আশা। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নেতারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন কি না, অথবা দলের কোনো পর্যায়ের নেতা অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেন কি না, তা পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে ওই সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় উপজেলার দ্বিতীয় ধাপে এখন পর্যন্ত ৬৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও বিএনপি নেতাদের অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যও অনেকে মাঠে তৎপর রয়েছেন।
নির্বাচনের দিন দলের ভূমিকা সম্পর্কে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, ভোটের দিন দলীয় নেতাকর্মীদের মূল কাজ হবে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা। বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী এ দিন প্রতিরোধের মতো কর্মকাণ্ডে যাবে না। এমন নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় দেওয়া হয়েছে।
ভোটের দিন নেতাকর্মীদের ওপর কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ থাকবে জানিয়ে তারা আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলবে, তাদের শোকজ করা হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গত সোমবার নয়াপল্টনে ঢাকা জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ জরুরি সভা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, ভোটের দিন করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটবিরোধী প্রচার চালানো, নেতাকর্মীদের কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে তাকে চিহ্নিত ও নিবৃত করা, ভোট নিয়ে কারও সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ানো ইত্যাদি।
উপজেলা নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এই ভোট হচ্ছে ডামি, প্রহসন ও জালিয়াতির ভোট। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কেউ এই ভোটে অংশগ্রহণ করবে না। জনগণের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, সারা দেশে আপনাদের যারা আত্মীয়স্বজন, ভাই-বোন আছেন, সবাইকে বলবেন, কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে না যায়। এই ডামি সরকারকে যেন কেউ সমর্থন না করে।’