চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সরকারি কর্মচারী আব্দুল গাফফার আকাশ (২৬) নামে এক যুবককে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে হত্যার অভিযোগে ট্রেনের টিটিইসহ রেলওয়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে থাকা ট্র্যাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) লালন চক্রবর্তী (৪২), রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০), অ্যাটেনডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়া (৩৬)।
গত ২৬ মে নিহত আব্দুল গাফফারের বাবা জিন্নাত আলী বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে এ হত্যা মামলা করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আব্দুল গাফফার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের মো. জিন্নাত আলীর একমাত্র ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের গেট কিপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২১ মে অফিসের কাজ শেষ করে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে কপোতাক্ষ-৭১৬ (রাজশাহী-খুলনা) এক্সপ্রেস ট্রেনের (ঙ) বগিতে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। ট্রেনে উঠার পরে দেখতে পান টিটিই লালন, এসআই পারভেজ, কনস্টেবল কাদের, অ্যাটেনডেন্ট মিলন, সোহাগ মিয়াসহ অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজন ট্রেনে টিকিট ছাড়া ওঠা যাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিচ্ছেন।
টাকা দিতে না পারলে যাত্রীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছেন। এটা দেখার পর আসামিদের এ অপকর্মের প্রতিবাদ করেন গাফফার। তখন আসামিদের সঙ্গে গাফফারের চলন্ত ট্রেনে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
একপর্যায়ে আসামিরা ট্রেনের দরজার কাছে নিয়ে জয়রামপুর রেলওয়ে স্টেশনের ১৫০ থেকে ২০০ গজ পূর্বে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। নিহত গাফফারের অসুস্থ বাবা-মা একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা।
গাফফারের বাবা জিন্নাত আলী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। কর্ম করতে পারি না। আমার সন্তানই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার এ অকাল মৃত্যু আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। আমার মৃত্যুর আগে আমার সন্তান হত্যাকারীদের বিচার দেখে মরতে চাই। এ সময় জিন্নাত আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার সন্তান হত্যার মামলা তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। হত্যা মামলার আসামি সবাই বাইরে বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি আমার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত টিটিই লালন চক্রবর্তী ও খুলনা রেলওয়ে পুলিশের এসআই পারভেজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন আমরা কপোতক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে ডিউটিতে ছিলাম। কিন্তু কোনো যাত্রীর সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটেনি। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস কালবেলাকে বলেন, হত্যা মামলাটি বর্তমানে ঝিনাইদহ পিবিআই তদন্ত করছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার গাজী রবিউল হক কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রাথমিক কপোতাক্ষ-৭১৬ ট্রেনের (ঙ) বগিতে থাকা প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আব্দুল গাফফার অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, শান্ত ও প্রতিবাদী স্বভাবের ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসী।
মন্তব্য করুন