সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রতাপপুরের পিয়াইন নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে।
ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলায় নদীপাড়ের শতশত বিঘা ফসলি জমি ও বাড়িঘর ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিয়াইন নদী ও কইন্না খালে শত শত নৌকা। ড্রেজার মেশিনের অনবরত শব্দ। নদী থেকে বালু তুলে নৌকায় ভরা হচ্ছে। গ্রামবাসী যাতে বাধা না দেয়, সেজন্য প্রভাবশালী চক্রের কিছু ক্যাডার সশস্ত্র পাহারা বসিয়েছে।
কয়েকজন বালু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস ধরে চলছে তাদের বালু উত্তোলনের কাজ। প্রতিদিন ২০ লাখ ফুট বালু তোলা হয়। যার বাজার মূল্য অন্তত এক কোটি টাকা।
প্রশাসন কোনো বাধা দেয় না- জানতে চাইলে একজন শ্রমিক বলেন, ‘গোয়াইনঘাট থানার স্থানীয় ইউনিয়নের দায়িত্বরত বিট পুলিশকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করা হয়, কেউ বাধা দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’
স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু লুটচক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার উত্তর প্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর, লুনীর কইন্না খালের তীরবর্তী ফসলি জমি।
একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ১২নং সদর ইউনিয়নের আমবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। সেখানকার পিয়াইন নদীতে রাতে ১০-১৫টি ড্রেজার গত দুই সপ্তাহ ধরে বালু উত্তোলন করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে অবৈধভাবে এ বালু তোলা হচ্ছে। এতে ভাঙনের কবলে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্কে আছেন। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অপর ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, ‘উত্তর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর এলাকায় দিন-রাত বালু লুট হচ্ছে এটা সত্য। তবে বালু লুটপাটে আমি জড়িত নই। যারা আমার নাম বলছে তারা দুশমনি করে বলছে। আমি এখন সিলেট শহরে আছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পারেন, কারা বালু লুটপাট চালাচ্ছে।’
গোয়াইনঘাট ১২নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন বলেন, ‘সদর ইউনিয়নের অধীন আমবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে সামাজিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। তার পরেও বালু তোলা বন্ধ করা যায়নি। পরে পরিষদের মাসিক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বালুখেকোদের একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। পরিষদের ৯ সদস্যই এ সিদ্ধান্তে একমত হয়ে স্বাক্ষর করেছেন।’
পরিষদে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন সদস্য এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যক্তির দায়ভার পরিষদ নেবে না, সে যেই হোক না কেন।’
এদিকে বিট পুলিশকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী কালবেলাকে বলেন, ‘ওই জায়গা ইজারা হয়নি। বালু উত্তোলনের খবর পেলেই পুলিশ নিয়ে অভিযানে যাব। গত সোমবার থেকেই ওই জায়গায় বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। একেবারেই সিল করা আছে। এ ছাড়া আমি প্রতিনিয়ত খবর রাখছি। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
মন্তব্য করুন