আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর হারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা লিস্টেড কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিপরীতে তালিকাবহির্ভূত বা নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার শর্ত সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের মূলধনি আয়ের ওপর করারোপ করারও চিন্তা চলছে। এতে একদিকে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। কিন্তু মাত্র ১৫ শতাংশ কর পরিশোধের বিনিময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ করে বাড়ানো হচ্ছে। যেসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার হস্তান্তর করেছে, সেসব কোম্পানির বর্তমান করহার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। আগামী বাজেটে তা আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হচ্ছে। আর যেসব লিস্টেড কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ১০ শতাংশের কম শেয়ার হস্তান্তর করেছে, তাদের করহার সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে আয়কর আইন অনুযায়ী যেসব কোম্পানি ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেনসহ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করবে, তাদের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের করহার প্রযোজ্য হবে। অবশ্য বর্তমানে দেশে এ ধরনের কোম্পানি সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।
অন্যদিকে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ের (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর করারোপ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারী ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে তাকে ১৫ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশের পুঁজিবাজার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানির সংকট রয়েছে। নতুন করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে আসছে না। এই পরিস্থিতিতে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান কমানো হলে ভালো কোম্পানি বাজারে আসার আগ্রহ পাবে না। এতে বাধাগ্রস্ত হবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ। কোথায় ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য প্রণোদনা দেওয়ার কথা, সেখানে লিস্টেড কোম্পানির করহার বাড়িয়ে দিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’
এনবিআর সূত্র জানায়, শুধু করপোরেট নয়, আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করহার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। কিন্তু কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করদাতাকে দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ কর। অর্থাৎ কেউ পুঁজিবাজার থেকে ক্যাপিটাল গেইন করলে যে হারে কর পরিশোধ করবে, সেই একই হারে কর দিলে অবৈধ আয় বৈধতা পেয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রের বৈধ আয়ের ওপর দ্বিগুণ কর দিতে হবে। এ ছাড়া করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আয়ের ওপর কর দেবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। আর কালো টাকা সাদা করলে দিতে হবে শুধু ১৫ শতাংশ। এ ধরনের পদক্ষেপে সৎ করদাতারা আরও নিরুৎসাহিত হবেন বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে দুর্নীতির সহায়ক। একজন করদাতা সৎভাবে অর্থ উপার্জন করে কর দেবেন ৩০ শতাংশ, আর অবৈধভাবে উপার্জন করে কর দেবেন ১৫ শতাংশ, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সমাজে বৈষম্য তৈরি হবে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারীকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারের উচিত এ ধরনের চিন্তা থেকে সরে আসা।’