ফোকাস ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মিয়ানমার যে দেশে গৃহযুদ্ধ কখনোই থামেনি

মিয়ানমার যে দেশে গৃহযুদ্ধ কখনোই থামেনি

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা দেশটির স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চলে আসছে। আশির দশক থেকে এ সংঘাত আরও তীব্র হয়েছিল। পরে এর তীব্রতা কমে। ২০২১ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে সামরিক বাহিনী। ফলে প্রথমে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে দেশটি। এক পর্যায়ে এতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী যোগ দেওয়ায় গৃহযুদ্ধ দাবানলের ছড়িয়ে পড়ে।

গৃহযুদ্ধের পটভূমি: ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। বেশিরভাগ সশস্ত্র গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। কিছু গোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে।

জনসংখ্যার বিন্যাস: মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের ইতিহাস বুঝতে হলে দেশটির জাতিগত জনসংখ্যার পরিস্থিতি বুঝতে হবে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬৮ ভাগ বামার হলেও সেখানে অন্যান্য জনগোষ্ঠী আছে আরও ৩২ ভাগ (৯% শান, ৭% কারেন, ৪% রাখাইন, ৩% বর্মী চীনা, ২% বর্মী ভারতীয়, ২% মোন এবং ৭% অন্যান্য) । ছোট-বড় ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে মিয়ানমার গঠিত। এর বাইরেও বেশ কিছু জাতিগোষ্ঠী আছে, মিয়ানমার সরকার যাদের নিজেদের জনগোষ্ঠী বলে স্বীকার করে না। যেমন রোহিঙ্গা, অ্যাংলো বার্মিজ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, বার্মিজ ইন্ডিয়ানদেরকে তারা অস্বীকার করতে চায়। স্বীকৃত-অস্বীকৃত প্রায় দেড়শ জাতিগোষ্ঠী ৮টি প্রধান ভাগে বিভক্ত। এই ভাগাভাগি জাতিগত নয়, হয়েছে প্রদেশভিত্তিক। তবে শাসক দল, সরকার-প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে বামার বা বর্মীদের অবস্থান-প্রাধান্য অধিক।

বর্তমান সংকটের শুরু: বর্তমান সংকটের শুরু ২০২০ সালে অং সান সু চির ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। সু চি ক্ষমতা গ্রহণের পর তার সরকার ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার যে সংবিধান প্রণয়ন করে, সেনাবাহিনী তা পছন্দ করেনি। তখন থেকেই তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ২০২১ সালে সুযোগ বুঝে তারা সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত ও কারাগারে আটক করে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে আস্থায় নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এলেও সে পথে হাঁটেননি সু চিও। তিনিও সেনাবাহিনীর সঙ্গে নানাভাবে বোঝাপড়া করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিপীড়ন ও নিধনে তিনিও শামিল হয়েছেন।

গত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক ও জাতিগত সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটির ২৬ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিকভাবে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে। এর অর্ধেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ সময়ে মিয়ানমারের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। জ্বালানির দাম প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও লাগামহীন। চলছে গৃহযুদ্ধ।

২০২১ সালে ক্ষমতাচ্যুত এনএলডির নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী সদস্যরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে, যাকে সংক্ষেপে এনইউজি বলা হয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে যোগ দেয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে এবং সব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘পিপল ডিফেন্স ফোর্স’ গঠন করে।

সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ নতুন মাত্রা পায় উত্তরাঞ্চলের তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী এক হয়ে আক্রমণ শুরুর পর। ২০২৩-এর অক্টোবরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর একজোট হয়ে সুসংগঠিতভাবে হামলা চালায় দেশটির উত্তরের শান রাজ্যের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী, যাদের একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে ‘থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স’ নামে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হচ্ছে আরাকান আর্মি (এএ)। যাদের সবকিছু নিয়মিত সেনাবাহিনীর আদলে গড়ে তোলা। এ গ্রুপগুলো দেশটির পশ্চিম-উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে। এসব গ্রুপের দখলে বর্তমানে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল। তবে রাজধানী নেপিদোসহ মধ্যাঞ্চল সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত গ্রুপগুলো মিয়ানমারের বিভক্তির পক্ষে নয়। তাদের দাবি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও দেশটিকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করা। যে দাবি তারা ১৯৪৮ সাল থেকে করে আসছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন / প্রচারণার প্রথম দিনই শিবিরের ব্যানার ভাঙচুর

হিজাব বিতর্কে ভিকারুননিসার সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত

এই ৩ ভুল করছেন? শত চেষ্টাতেও কমবে না মেদ

একদিন পর ভেসে উঠল ইসমাইলের মরদেহ

বিশ্বে প্রথমবার মানব শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই : হাসনাত

ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ৪৭১

আমি বিবাহিত, ফেসবুকে প্রমাণ করার কিছু নেই : অপু

বাংলাদেশে শুরু হলো দ্বিতীয় আইসিএফপি সম্মেলন

মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রকাশ

১০

ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে সাদিক কায়েমের পোস্ট

১১

বিটিভি চট্টগ্রামের বিশেষ নাটক ‘জিনের বাদশা’

১২

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাক্ষাৎ

১৩

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৪৭০ জন

১৪

ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন

১৫

ড্রেনে গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কেঁপে উঠল আশপাশের এলাকা

১৬

আমিরকে নিয়ে এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণা ওমানের

১৭

গাইবান্ধায় কবরস্থান থেকে ৩০টি কঙ্কাল চুরি

১৮

কাতারে জুমার নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ

১৯

বরগুনায় অবৈধ ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান

২০
X