ফোকাস ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে আবাস হারাচ্ছে অতিথিরা

দেশে আবাস হারাচ্ছে অতিথিরা

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়—জীবনানন্দ দাশের এই কালজয়ী আকুতিই যেন পরিযায়ী পাখিদের চিরন্তন প্রত্যাবর্তনের এক অনন্য কাব্যিক দলিল। কবির এ চরণে ধনধান্যে ভরা নয়নাভিরাম এ রূপসী বাংলার প্রতি যে গভীর মমতা ফুটে উঠেছে, হয়তো সেই টানে প্রতি বছর হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফিরে আসে আকাশের যাযাবররা। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে পাখিদের এ যাত্রা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের এক করুণ আর্তনাদও।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পরিযায়ী জলচর পাখির সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। গবেষকদের মতে, পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো— আবাসস্থল ধ্বংস, পাখির এলাকায় গবাদি পশু চরানো, গৃহপালিত হাঁস পালন এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। তারা মনে করছেন, এ সমস্যা সমাধানে প্রাণিসম্পদ, কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

প্রতি শীত মৌসুমে বাংলাদেশ পরিযায়ী পাখির জন্য এক মনোমুগ্ধকর আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়, বিশেষ করে হাওর অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায়। উত্তর মঙ্গোলিয়া, তিব্বত ও চীনের কিছু অংশ, রাশিয়া এবং সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে এসব পাখি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে। তীব্র শীত থেকে বাঁচতে তারা খাদ্যসমৃদ্ধ ও অনুকূল জলবায়ুর খোঁজে বাংলাদেশে আসে।

এই পাখিরা দুটি প্রধান পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে—ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রালেশিয়ান ফ্লাইওয়ে এবং সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে। ২০১০ সালে ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রালেশিয়ান ফ্লাইওয়ে পার্টনারশিপ এই পথকে স্বীকৃতি দেয়।

শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা মূলত ছয়টি বড় জলাভূমি এলাকায় আসে। এর মধ্যে তিনটি হাওর—হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার ও হাইল এবং তিনটি উপকূলীয় এলাকা—নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান, সোনাদিয়া দ্বীপ ও গাঙ্গুরিয়ার চর। প্রতি বছর এসব এলাকায় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে, যা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সৃষ্টি করে এবং পাখিপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।

তবে গত কয়েক দশকে এসব পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সংরক্ষণকর্মী ও গবেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে সরকারের কিছু অনুকূল নয়—এমন নীতির কারণে দ্রুত আবাসস্থল ধ্বংস।

পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ

টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় ৬৯ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪১টি পরিযায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব পাখির সংখ্যায় হ্রাসের প্রবণতা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর আয়তনের টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শীতকালীন আশ্রয়স্থল। প্রতি বছর দেশের মোট পরিযায়ী পাখির প্রায় ৪৩ শতাংশ এখানে আসে।

২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাখির সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ৫৯ শতাংশ প্রজাতির সংখ্যা কমছে। এর মধ্যে রয়েছে বিপন্ন বেয়ার্স পোচার্ড এবং ঝুঁকিপূর্ণ কমন পোচার্ড।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া অঞ্চলে অবস্থিত নিঝুম দ্বীপ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে ২০০৯-১১ ও ২০১৮-২০ সালের তথ্য বিশ্লেষণে ৫৮ প্রজাতির জলচর পাখির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩টি প্রজাতি আইইউসিএনের লাল তালিকায় বিপন্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।

যদিও সেখানে মোট পাখির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে, গবাদি পশু পালন, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং ম্যানগ্রোভ বনায়নের কারণে পাখির আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। গবেষকরা নিরাপদ ও উপযোগী আবাস নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যবস্থাপনায় নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

গবেষকরা হাওর ও উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে পাখি কমে যাওয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছেন।

হাওর হলো উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জলাভূমি, যা বছরে অন্তত ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। এখানকার মানুষের জীবিকা মূলত মাছ ধরা ও এক মৌসুমের ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় গত কয়েক দশক ধরে হাঁস ও গবাদি পশু পালনসহ বিকল্প জীবিকা উৎস বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইইউসিএন বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী গবেষক এবিএম সরোয়ার আলম বলেন, শীতকালে অতিরিক্ত গবাদি পশু ও গৃহপালিত হাঁস পালন টাঙ্গুয়ার, হাকালুকি ও হাইল হাওরের মতো জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখির আবাস নষ্ট করছে। এতে পাখির খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয় এবং কাদামাটি সমতল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপকূলীয় এলাকায় সমস্যার ধরন ভিন্ন। সেখানে সরকারের উপকূলীয় বনায়ন কর্মসূচির কারণে আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নোরা ফাতেহি

তেঁতুলিয়ায় হাড় কাঁপানো শীত

চট্টগ্রামের কোচের দায়িত্বে আইপিএল খেলা ক্রিকেটার

ফের পুত্রসন্তানের মা হলেন ভারতী সিং

শহীদ ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন

আজকের স্বর্ণের বাজারদর

খুন করে বিপ্লবের চেতনা দমন করা যায় না : জামায়াত আমির

রোনালদোকে ছুঁয়ে রিয়ালকে জেতালেন এমবাপ্পে, জয় পেল সিটিও

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

সমাজকে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আমি এমপি হতে চেয়েছি : অ্যাটর্নি জেনারেল

১০

বদলে গেল বিপিএল শুরুর সময়

১১

তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সিইসির বৈঠক রোববার

১২

বিএনপি সব ধর্মের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে : ড. মারুফ

১৩

মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৪

সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

১৫

মিরপুরে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা

১৬

বগুড়ায় স্কুলছাত্র নিখোঁজ

১৭

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আরেক তেল ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

১৮

গাজায় সংযম দেখানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের 

১৯

সুখবর পেলেন ছাত্রদল নেতা

২০
X