কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডানায় বিস্ময়

ডানায় বিস্ময়

বসন্তের শুরুতে আকাশে চোখ রাখলে দেখা যায় পাখির সারি। এরা ফিরছে দূরের শীতল দেশ ছেড়ে, পরিচিত আবাসে। কেউ কেউ তাড়া নিয়ে ফিরছে, যেন কে আগে পৌঁছবে ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গায়।

অনেক সময় এমন হয়, শীত এখনো পুরোপুরি যায়নি, অথচ পাখিরা রওনা হয়ে গেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, গ্রীষ্ম একেবারে কড়া নাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, আগে গিয়ে বাসার জায়গা দখল করাটাই মূল বিষয়।

গবেষণা বলছে, দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া পাখিদের সংখ্যা কমছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তারা কম দূরত্বে ভ্রমণ করছে, এমনকি কোনো কোনো প্রজাতি আর যাত্রা করছে না।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার ইউরেশিয়ান ব্ল্যাকক্যাপ পাখির ওপর দীর্ঘ গবেষণায় দেখেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মে তাদের ‘ভ্রমণ প্রবণতা’ কমে আসছে। শুরুতে কম দূরত্ব, পরে ভ্রমণই বন্ধ।

তবু এখনো প্রতি বছর বিশ্বের আকাশে প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাখি মাইগ্রেট করে। শুধু ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যেই উড়ে চলে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন পাখি। এই যাত্রায় অনেকে অতিক্রম করে মহাদেশের পর মহাদেশ। যেমন ধাড়ি রাজহাঁস ভারতে শীত কাটিয়ে মধ্য এশিয়ায় উড়ে যায়। পথে পাড়ি দেয় হিমালয়, সাত হাজার মিটার উচ্চতায়।

আলপাইন সুইফট পাখির সহ্য শক্তি তো আরও অবাক করার মতো। প্রায় সাত মাস ধরে টানা উড়তে পারে, এমনকি ঘুমের সময়ও। প্রশ্ন হলো, এত কষ্ট করে পাখিরা কেন উড়ে যায়? এর উত্তর খুব সরল—খাদ্যের খোঁজ। বরফে ঢাকা জমিনে পোকামাকড় বা বীজ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই তারা চলে যায় উষ্ণ অঞ্চলে, আবার ফিরে আসে যখন খাবার মেলে, ছানাদের বড় করার উপযুক্ত সময়।

প্রশ্ন আসে, পাখিরা কী করে পথ খুঁজে পায়? এখানে আছে প্রকৃতির এক অদ্ভুত বিস্ময়। তারা যেন তিনটি কম্পাস সঙ্গে নিয়েই ওড়ে—সূর্য, তারা আর পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র। সূর্যের আলো দেখে তারা দিক চিনে নিতে পারে, এমনকি মেঘলা দিনেও। রাতে যারা ওড়ে, এরা দেখে আকাশে তারার অবস্থান। আর পৃথিবীর চৌম্বক রেখা ধরেও তারা বোঝে উত্তর-পূর্ব কোথায়, দক্ষিণ কোথায়।

তবে প্রথম যাত্রা শুধুই জিনগতভাবে নির্ধারিত। পরে সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়ে। জার্মান ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশন বলছে, এই অভিজ্ঞতাই পথ চিনে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তবু কখনো-সখনো পাখিরা পথ হারায়। কেউ হয়তো প্রথমবার উড়ছে, কেউ হয়তো কোনো ঝড়ের কবলে পড়েছে, আবার কারও দিকজ্ঞান কাজ করেনি ঠিকভাবে।

এই পাখিরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—পরিবেশ রক্ষা মানে শুধু গাছ লাগানো নয়, বরং জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখা। ডানায় ভর করে যখন এরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দেয়, তখন যেন আমাদেরও মনে হয়—এই পৃথিবী আসলে সবার জন্য। সীমাহীন, স্বাধীন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নোরা ফাতেহি

তেঁতুলিয়ায় হাড় কাঁপানো শীত

চট্টগ্রামের কোচের দায়িত্বে আইপিএল খেলা ক্রিকেটার

ফের পুত্রসন্তানের মা হলেন ভারতী সিং

শহীদ ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন

আজকের স্বর্ণের বাজারদর

খুন করে বিপ্লবের চেতনা দমন করা যায় না : জামায়াত আমির

রোনালদোকে ছুঁয়ে রিয়ালকে জেতালেন এমবাপ্পে, জয় পেল সিটিও

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

সমাজকে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আমি এমপি হতে চেয়েছি : অ্যাটর্নি জেনারেল

১০

বদলে গেল বিপিএল শুরুর সময়

১১

তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সিইসির বৈঠক রোববার

১২

বিএনপি সব ধর্মের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে : ড. মারুফ

১৩

মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৪

সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

১৫

মিরপুরে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা

১৬

বগুড়ায় স্কুলছাত্র নিখোঁজ

১৭

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আরেক তেল ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

১৮

গাজায় সংযম দেখানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের 

১৯

সুখবর পেলেন ছাত্রদল নেতা

২০
X