ইসলামে মায়ের প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও পুরস্কার। মাসের পর মাস সন্তান বহন, ধৈর্য, সন্তান প্রসব, স্তন্যদানসহ অসহনীয় কিছু কষ্ট বহন করতে হয় নারীদের। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে যুগে যুগে নারীরা মধুর এ কষ্ট স্বীকার করে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটি আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত জীবন বিধান। গর্ভধারণ এবং দীর্ঘ দশ মাস দশ দিন গর্ভের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে আল্লাহতায়ালা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। এভাবে সৃষ্টিগতভাবে নারীর দৈহিক গঠনে জুড়ে আছে গর্ভধারণক্ষমতা। গর্ভধারণক্ষমতা শুধু নারীদের মধ্যে সীমাবব্ধ নয়, বরং পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, প্রাণিকুলের সর্বত্রে আল্লাহর এ বিধান কার্যকর রয়েছে। গর্ভধারণের কঠিন দায়িত্ব পালনের কারণে নারীরা মাতৃত্বের মহা মর্যাদায় সমাসীন হয়েছে। মায়ের মর্যাদা সন্তানের কাছে পিতার তুলনায় তিনগুণ বেশি বলার এটাই অন্যতম কারণ। মাতৃত্বের বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে বিস্তারিত পাঠ রয়েছে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর পুত্র ইব্রাহিমের দুধমাতা সালামা (রা.)-কে নবীজি (সা.) বলেছিলেন—তোমরা নারীরা কি এতে খুশি নও যে, যখন কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে গর্ভধারিণী হয় আর স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তখন সে আল্লাহর জন্য সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পেতে থাকবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (কান্নাকাটি করে মাকে বিরক্ত করে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর জন্য নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পাবে।’ (মুজামু তাবরানি: ৬৯০৮; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৪/৩০৫)। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রূণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাপিত জীবনের চলাফেরায়, ওঠাবসায়, সাংসারিক কাজকর্মে, প্রতিটি পদক্ষেপে অবর্ণনীয় ধকল বহন করতে হয়। একজন মায়ের এ অবর্ণনীয় কষ্টের কথা কোরআনে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘সন্তানের মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সয়ে পেটে বহন করেছে।’ (সুরা লুকমান: ১৪)
নারীর আরেকটি প্রধান দায়িত্ব হলো সন্তান প্রসব করা। প্রসবকালে একজন নারীকে রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত করে আরেকটি মানব সন্তান পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে পারে। সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে কখনো কখনো মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারপরও এ তীব্র যন্ত্রণাকে তুচ্ছ করে মা শুধু দেখতে চায় তার নবজাত শিশুর মায়াবী মুখখানি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তার মা তাকে খুব কষ্ট করে পেটে ধারণ করেছে, খুব কষ্টে প্রসব করেছে এবং গর্ভধারণ থেকে দুধপান পর্যন্ত ত্রিশ মাস অতিবাহিত করেছে।’ (সুরা আহকাফ: ১৫)। নারীর গর্ভধারণের কষ্ট চিন্তা করে তার প্রাপ্য মর্যাদায় সমাসীন করা পুরুষদের দায়িত্ব। আর নারীরা আল্লাহপ্রদত্ত এ অমোঘ নীতি—গর্ভধারণের গৌরব অন্তরে ধারণ করে অপরিসীম ফজিলত ও সওয়াবের অধিকারী হবেন।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
মন্তব্য করুন