কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সৌদিতে ফ্ল্যাটে মিলল দুই ভাইয়ের মরদেহ, পরিবারে শোকের ছায়া

সৌদিতে নিহত দুই ভাই কামরুল ইসলাম সাগর ও কামরুজ্জামান কাকন। ছবি : সংগৃহীত
সৌদিতে নিহত দুই ভাই কামরুল ইসলাম সাগর ও কামরুজ্জামান কাকন। ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে একটি ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন স্বজনরা।

বুধবার (২১ মে) তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২) গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শ পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।

মোশারফ হোসেন লম্বরি বলেন, দুই ছেলে ছাড়া কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়েছে আমার! বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছেন বলে জানান তিনি। পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পারেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে।

মোশারফ হোসেনের অভিযোগ, বাহার উদ্দিন নামে একজন দুই সন্তানকে খুন করিয়েছে। এ সময় তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। এদিকে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ও স্বজনরা। পরিকল্পিতভাবে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এ ঘটনার বিচার চান তারা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কাকন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনে সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন। মোশারফ হোসেন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে অগ্রিম ৩ লাখ টাকা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি।

পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে কামরুল ইসলাম সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি আরব যান সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে সাগরকে দাম্মামে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করেন বাহার উদ্দিন। ছেলের কথা ভেবে টাকা দিতে বাধ্য হন মোশারফ হোসেন।

মোশারফ হোসেনের অভিযোগ, বাহাউদ্দিন কোনো কথা রাখেননি। সাগরকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেন। একপর্যায়ে মোশারফ হোসেন কানাডা পাঠানো জন্য দেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বাহার উদ্দিন বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন। সে মোতাবেক গত বছর ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি আরব নিয়ে যান বাহার।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, একপর্যায়ে বাহার দুই ভাইকে কাজ না দিয়ে ফ্ল্যাটে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর ওমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার কথা বলেন বাহার। সে অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে মোশারফ হোসেন সৌদি আরব যান।

এ সময় কাজের কথা জানতে চাইলে কাকন এবং সাগর জানান, তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। ছোট্ট একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন মোশারফ হোসেন। কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগ মোশারফ হোসেনকে দিয়ে তা ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে সেই ব্যাগ থেকে একটি পুঁটলি উদ্ধার করে এবং পুঁটলিটি তারা রেখে দেয়। মোশারফ হোসেন দেশে ফেরার পর বাহার সেই পুঁটলি ফেরত চান। সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে তিনি পুঁটলিতে ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ছিল দাবি করেন। স্বর্ণ ফিরিয়ে দিতে মোশারফ হোসেনকে হুমকি দিতে থাকেন। এ ঘটনার পর মোশারফ হোসেন গাজীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

৯ মে মাইক্রোবাসে একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্র নিয়ে মোশারফের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। মোশারফকে না পেয়ে তারা তার বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং কাকন ও সাগরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ এসে আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন বলেন, দুই ছেলে ছাড়া আমার কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়েছে আমার! বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছেন।

পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পারেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে।

মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বাহারই আমার দুই সন্তানকে খুন করিয়েছে। এ সময় তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। এদিকে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ও স্বজনরা। পরিকল্পিতভাবে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এ ঘটনার বিচার চান তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হংকংয়ের বিপক্ষে জয় নিয়ে আশাবাদী হামজা

যে ৬ সমস্যায় কখনোই এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া যাবে না

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

চাঁদাবাজদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে : কফিল উদ্দিন

ডাকসুর জিএস ফরহাদ হোসেনকে রাঙামাটিতে সংবর্ধনা

পুলিশ সদস্যদের হামলা ও অপদস্তের প্রতিবাদ দুই সংগঠনের 

ফুটপাতে পাওয়া সেই নবজাতককে নিতে চান ২৩ দম্পতি

আগামী বছর থেকে ফুটবল ক্যালেন্ডারে আসছে বড় পরিবর্তন

ট্রাম্পের জন্মদিনে হোয়াইট হাউসে ইতিহাস রচনা করবে ইউএফসি লড়াই

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা সংস্কার কমিশন করা হবে : তারেক রহমান

১০

আধুনিক যন্ত্রেই নিশ্চিত হবে নিরাপদ খাদ্য : মেয়র শাহাদাত

১১

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন স্থগিত

১২

একযোগে গণঅধিকার পরিষদের ৩৬ নেতার পদত্যাগ

১৩

মেঘনা নদীতে নৌযানে চাঁদাবাজি, সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৫

১৪

ইরাক থেকে প্রচুর তেল নিচ্ছে চীন-ভারত

১৫

‘রোহিত-বিরাটের বিদায়ের পিছনে দায় গম্ভীরের’

১৬

৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, এনবিআরের সদস্য বেলালের নামে দুদকের মামলা

১৭

ঢাকার আদালতে ১৩৫ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস

১৮

আ.লীগ নেতার হিমাগারে সেফটিপিন ফুটিয়ে তিন ভাইবোনকে নির্যাতন

১৯

ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রমাণ আছে : আমিনুল হক

২০
X