সাধারণ ভাষায় দারিদ্র্য বলতে মূলত অভাবের চরম মাত্রাকে বোঝায়। অর্থাৎ একজন মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে তার নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রয়োজনগুলো মেটাতে অক্ষম হয়, তখন সেটিকে আমরা দারিদ্র্য বলতে পারি। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, দারিদ্র্য সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উচ্চারিত বঞ্চনা বলা হয় এবং এর অনেক মাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয় এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্য ও পরিষেবাগুলো অর্জনে অক্ষমতা। এ ছাড়া দারিদ্র্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিম্ন স্তরের, বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশনের দুর্বল ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত শারীরিক নিরাপত্তা, কণ্ঠস্বরের অভাব, অপর্যাপ্ত ক্ষমতা এবং একজনের জীবন উন্নত করার সুযোগকে অন্তর্ভুক্ত করে।
বলা যায় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য। প্রতিটি দেশেই মোটামুটি দরিদ্র মানুষ রয়েছে। আর এ দারিদ্র্য কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় মূলত সেটি কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন দিবস পালিত হয়ে আসছে।
যদিও দিবসটি প্রচারের জন্য ২০০৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করা হয়। চরম দারিদ্র্যের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত মানবাধিকার রক্ষকসহ এ বিষয় নিয়ে কাজ করা সদস্যদের নিয়েই মূলত এ কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে জাতিসংঘ ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ন্যায়, শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অপব্যবহার বন্ধ করা। বর্তমান বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই গলার কাঁটা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই।
তাহলে এ দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে আমাদের কী করণীয়? দারিদ্র্যবিমোচনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেখুন, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো হচ্ছে—খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা। তবে এগুলোর সঙ্গে বর্তমানে আরেকটি বিষয়কেও মৌলিক অধিকার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেটি হচ্ছে নিরাপত্তা। তাহলে একজন মানুষের যখন এসব অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাবে, তখন তাকে দারিদ্র্য গ্রাস করার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এ ছাড়া প্রতিটি দেশে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, পণ্য বিনিময় প্রথা চালু করা বিকল্প খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা ইত্যাদির মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষদের অভাব ঘুচবে, অন্যদিকে তেমনি তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের সরকার যেভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করেছে, তা প্রশংসনীয়। সরকার দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি হিসেবে বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা উপবৃত্তি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রম। এগুলো চালু রাখার পাশাপাশি আমাদের সুশীল সমাজের আরও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি গড়ে তুলতে হবে।
মো. রাকিব, শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম