সালমা ফাইয়াজ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মানবতার মহৎ গুণই পূজ্য

মানবতার মহৎ গুণই পূজ্য

অহং আর অহংকারের মধ্যে তফাত আছে। অহং যেখানে ‘আমি’, সেখানে তা আত্মবিশ্বাস। সে এক পরম চৈতন্যময় সত্তা। তার চেতনার রঙে পান্না সবুজ হয়, চুনি ওঠে লাল হয়ে। এ মানুষটি যেখানেই জন্মাক, তার গায়ের রং যেমনই হোক, সে ধনী হোক বা গরিব, যদি সত্যের পথে চলে, তাহলে যখন বলে ‘উন্নত মম শির’, তখন সেটা তার আত্মবিশ্বাস। প্রতিটি মানুষের অধিকার মাথা উঁচু করে চলা। কয়েক লাখ বছর আগে, যখন সে চতুষ্পদ থেকে দুপায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াতে শিখেছিল, সে হোমো ইরেক্টাস হলো, সেদিন থেকে সে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করল।

সেই স্বাধীনতা হলো, কোথায় কার কাছে সে বিনত হবে, কাকে কুর্নিশ করবে, কাকে প্রণাম করবে, তা সে নিজে ঠিক করবে। হাজার হাজার বছর ধরে বিবর্তনের সাধনায় অর্জিত মাথা তুলে জীবন কাটানোর স্বাধীনতা। তারপর আরও হাজার হাজার বছর পরে, তারা বুদ্ধিমান মানুষ হলো—হোমো সাপিয়েন্স। সে এখন স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল বিজয়ী। সে মাথা উঁচু করে যুদ্ধ থেকে শুরু করে মহাকাশেও তার বিজয় কেতন ওড়াচ্ছে। কিন্তু বহু মেরুদণ্ডী মানুষ, সেদিনের হোমো ইরেক্টাস, স্বেচ্ছায় নতজানু হয় ক্ষমতাবানের কাছে, পদানত হয়। পেশিশক্তির কাছে স্বেচ্ছা দাস হয়ে থাকে। মালিকের কাছে, এমনকি অফিসের বড় বসের কাছেও গোলাম হয়ে থাকে। যে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে কুর্নিশ করে না, সেই মানুষই কি না ক্ষমতাবানের পায়ে নিত্য মাথা কুটে। মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু অনেক মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় না। সৃষ্টিকর্তাকে সে ভয় পায় বলেই উপাসনা করে; তাকে ভালোবেসে আপন করে নেয় না।

সেই মানুষই প্রকৃত স্বাধীন, যে সবার আগে নিজেকে শ্রদ্ধা করে এবং কোথায় অবনত হতে হবে, কোথায় উন্নত শির রাখতে হবে, তা নিজে ঠিক করতে পারে। ভক্তি যেখানে মুক্তি নয়, দাসত্ব—সে ভক্তিকে বেছে নেয় কঠোর মূল্য দিয়ে। সেই আত্মবিশ্বাসী মানুষদের সালাম!

আত্মবিশ্বাস আর অহংকারের মধ্যে সীমারেখা কিন্তু স্পষ্ট। আত্মবিশ্বাসী মানুষ তার জীবন আল্লাহর নির্দেশে চলায়... কিছু পাওয়ার লোভে সে আত্মার স্বাধীনতাকে বিক্রি করে না। তার নীতির জন্য সে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি থাকে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের শর্তে বাঁচে। সে জানে, কোনো মানুষই মহৎ হয়ে জন্মায় না। কেউ শৈশব থেকে মহত্ত্ব অর্জন করে, কেউ বড় হয়ে। মহত্ত্ব অর্জন করতে হয় বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। জ্ঞানই মহৎ হওয়ার তোরণদ্বার। বিনয়, নম্রতা, সমদর্শন, এবং প্রতিপত্তি ও প্রভাবশালীদের উপেক্ষাই মহত্ত্বের লক্ষণ। অধিকাংশ মহত্ত্ব আরোপিত; ক্ষমতাবানদেরই আমরা মহৎ বলি। কিন্তু ধন, প্রভাব, প্রতিপত্তি মহত্ত্বকে নষ্ট করে দেয়।

সাধারণ মানুষও আত্মবিশ্বাসী হতে পারে, যদি সে মনে করে, সব মানুষই সমান হয়ে জন্মায়। কিন্তু যারা মানবতায় মহৎ গুণ অর্জন করে, তারাই পূজ্য, বাকিরা ত্যাজ্য।

লেখক: বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শতকোটি টাকার সরকারি জমি সাড়ে ৫ লাখে হাতবদল

নারায়ণগঞ্জে দগ্ধদের সবার অবস্থা সংকটাপন্ন

নতুন ’ইনিংস’ শুরু করলেন শচীনকন্যা সারা

যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন কেউ গোপনে আপনাকে ভালোবাসে

টিকটকার ইয়াসমিন আসলে ছেলে, জেন্ডার ফাঁসের পর গ্রেপ্তার

স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম বরদাশত করা হবে না : উপদেষ্টা নুরজাহান 

নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে যা জানালেন সিইসি

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় নারীকে খুন, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

আজ বেবী নাজনীনের জন্মদিন

চা দোকানের মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৩ লাখ টাকা

১০

বাড়িতে ঢুকে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১১

দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

১২

রাগিনী এমএমএস ৩’তে যুক্ত হচ্ছেন তামান্না ভাটিয়া

১৩

পর্তুগালের তারকা ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি বাড়াল ম্যানসিটি

১৪

ছবিতে কী দেখছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনি অলস না পরিশ্রমী!

১৫

এশিয়া কাপের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ

১৬

 গাজায় দুর্ভিক্ষ হচ্ছে কি না, জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব

১৭

কেন্দ্র দখল করলেই ভোট বাতিল : সিইসি

১৮

গোপালগঞ্জে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ৬ নেতার পদত্যাগ

১৯

সিপিএলে সাকিবের ব্যর্থতা চলছেই, দল হারল ৮৩ রানে

২০
X