বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
সালমা ফাইয়াজ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মানবতার মহৎ গুণই পূজ্য

মানবতার মহৎ গুণই পূজ্য

অহং আর অহংকারের মধ্যে তফাত আছে। অহং যেখানে ‘আমি’, সেখানে তা আত্মবিশ্বাস। সে এক পরম চৈতন্যময় সত্তা। তার চেতনার রঙে পান্না সবুজ হয়, চুনি ওঠে লাল হয়ে। এ মানুষটি যেখানেই জন্মাক, তার গায়ের রং যেমনই হোক, সে ধনী হোক বা গরিব, যদি সত্যের পথে চলে, তাহলে যখন বলে ‘উন্নত মম শির’, তখন সেটা তার আত্মবিশ্বাস। প্রতিটি মানুষের অধিকার মাথা উঁচু করে চলা। কয়েক লাখ বছর আগে, যখন সে চতুষ্পদ থেকে দুপায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াতে শিখেছিল, সে হোমো ইরেক্টাস হলো, সেদিন থেকে সে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করল।

সেই স্বাধীনতা হলো, কোথায় কার কাছে সে বিনত হবে, কাকে কুর্নিশ করবে, কাকে প্রণাম করবে, তা সে নিজে ঠিক করবে। হাজার হাজার বছর ধরে বিবর্তনের সাধনায় অর্জিত মাথা তুলে জীবন কাটানোর স্বাধীনতা। তারপর আরও হাজার হাজার বছর পরে, তারা বুদ্ধিমান মানুষ হলো—হোমো সাপিয়েন্স। সে এখন স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল বিজয়ী। সে মাথা উঁচু করে যুদ্ধ থেকে শুরু করে মহাকাশেও তার বিজয় কেতন ওড়াচ্ছে। কিন্তু বহু মেরুদণ্ডী মানুষ, সেদিনের হোমো ইরেক্টাস, স্বেচ্ছায় নতজানু হয় ক্ষমতাবানের কাছে, পদানত হয়। পেশিশক্তির কাছে স্বেচ্ছা দাস হয়ে থাকে। মালিকের কাছে, এমনকি অফিসের বড় বসের কাছেও গোলাম হয়ে থাকে। যে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে কুর্নিশ করে না, সেই মানুষই কি না ক্ষমতাবানের পায়ে নিত্য মাথা কুটে। মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু অনেক মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় না। সৃষ্টিকর্তাকে সে ভয় পায় বলেই উপাসনা করে; তাকে ভালোবেসে আপন করে নেয় না।

সেই মানুষই প্রকৃত স্বাধীন, যে সবার আগে নিজেকে শ্রদ্ধা করে এবং কোথায় অবনত হতে হবে, কোথায় উন্নত শির রাখতে হবে, তা নিজে ঠিক করতে পারে। ভক্তি যেখানে মুক্তি নয়, দাসত্ব—সে ভক্তিকে বেছে নেয় কঠোর মূল্য দিয়ে। সেই আত্মবিশ্বাসী মানুষদের সালাম!

আত্মবিশ্বাস আর অহংকারের মধ্যে সীমারেখা কিন্তু স্পষ্ট। আত্মবিশ্বাসী মানুষ তার জীবন আল্লাহর নির্দেশে চলায়... কিছু পাওয়ার লোভে সে আত্মার স্বাধীনতাকে বিক্রি করে না। তার নীতির জন্য সে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি থাকে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের শর্তে বাঁচে। সে জানে, কোনো মানুষই মহৎ হয়ে জন্মায় না। কেউ শৈশব থেকে মহত্ত্ব অর্জন করে, কেউ বড় হয়ে। মহত্ত্ব অর্জন করতে হয় বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। জ্ঞানই মহৎ হওয়ার তোরণদ্বার। বিনয়, নম্রতা, সমদর্শন, এবং প্রতিপত্তি ও প্রভাবশালীদের উপেক্ষাই মহত্ত্বের লক্ষণ। অধিকাংশ মহত্ত্ব আরোপিত; ক্ষমতাবানদেরই আমরা মহৎ বলি। কিন্তু ধন, প্রভাব, প্রতিপত্তি মহত্ত্বকে নষ্ট করে দেয়।

সাধারণ মানুষও আত্মবিশ্বাসী হতে পারে, যদি সে মনে করে, সব মানুষই সমান হয়ে জন্মায়। কিন্তু যারা মানবতায় মহৎ গুণ অর্জন করে, তারাই পূজ্য, বাকিরা ত্যাজ্য।

লেখক: বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১০

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১১

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১২

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৩

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৪

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৫

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৬

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৭

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৮

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

১৯

প্রথমবারের মতো ইউনেস্কোর সভাপতি বাংলাদেশ

২০
X