কাজী বনফুল
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ এএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও বৈশ্বিক গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও বৈশ্বিক গুরুত্ব

বিশ্বের বেশিরভাগ প্রস্ফুটিত দৃষ্টিকর্ণ যখন একত্রে কোনো এক বিশেষ বিন্দুতে দীর্ঘসময়ব্যাপী কৌতূহলপূর্ণ আবেদনে আটকে যায়, তখন বুঝতে হবে সেটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমগ্র বিশ্বেরই ছোট-বড় ও মাঝারি রকমের নানা ইন্টারেস্ট। ঠিক তেমনটিই আমরা দেখতে পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে। গত ৫ নভেম্বর সমাপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্বের সব পতি-অধিপতি ও বাহাদুর-অবাহাদুর সবাই ভীষণ আগ্রহ ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রহর গুনেছে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যার পেছনে রয়েছে এক প্রবল আকাঙ্ক্ষার জায়গা, সে আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তিটা নানান দেশ, নানান মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রয়োজনীয় বটে। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির দিকে সবার মনোযোগ সেটা হচ্ছে—বিশ্বের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা। সমগ্র বিশ্ব যেন জ্বলন্ত আগুনের কুণ্ডলীতে পরিণত হয়েছে।

এই সুখ বিঘ্নিত সংঘাতপূর্ণ পৃথিবীর বুকে ব্যাকুল বকুলের মতো সমগ্র মানুষ তাকিয়ে আছে কোন শান্তি ও সুখ বহনকারী ভ্রমরের প্রতীক্ষায়? পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার সেই সুখ বহনকারী ভ্রমর হিসেবে মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পেই ভরসা রাখতে চাইছে।

বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে আঁচ প্রবাহিত হচ্ছে, সেই আঁচের উত্তপ্ত দহনে ঝলসে যাচ্ছে ক্রীড়নক থেকে অক্রীড়নক, সাধারণ থেকে অসাধারণ সবাই। কারণ নগর পুড়িলে দেবালয়ে এড়িয়েছে কবে কোন শহরে, তেমন কোনো নজির কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। আর এজন্যই সবার অবশেষে বোধোদয় হয়েছে যে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের লাগাম যদি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় সামলানো না যায়, তাহলে সেই লাগাম ছিঁড়ে গেলে সামলানো বড় বেশি দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর তখন মাথা-চুল-কান-বুক একত্রে চাপড়েও কোনো লাভ হয় না। তখন আর এই ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় না। সে কারণে সবাই একত্রিত মনোভাবাপন্ন হয়ে এই ধ্বংসের প্রচণ্ড বিমর্ষতার দিকে ধাবমান দেশ, মানুষ, ভূমি ও ভূমিজা রক্ষাকল্পে সবাই ট্রাম্পকার্ডের চমকেই আস্থা রাখতে চাইছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাকিয়ে আছে সমগ্র বিশ্বের মানুষ। সবাই ট্রাম্পের প্রতি আশাবাদী যে, তিনি বৈশ্বিক এ মানব সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও রাশিয়া-ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ সংঘাতের দাবানলকে প্রশমিত করে পৃথিবীর বুকে শান্তির স্নিগ্ধ সমীরণ প্রবাহিত করে মানুষ ও সমগ্র জীবকুলকে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করবেন। সেইসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী বিনির্মাণে সামগ্রিক ঐক্যের পথে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। কারণ সমগ্র পৃথিবী ধীরে ধীরে যে পথে এগিয়ে চলছে, তাতে ভবিষ্যৎ মানবসভ্যতার জন্য সেটা বড় বেশি হুমকিস্বরূপ হবে, যা কল্পনাতীত।

সমগ্র পৃথিবী জুড়েই এমন একটা গোত্র বা গোষ্ঠী আছে বা থাকে, যাদের কাজই হচ্ছে একে অন্যের ভেতর সংঘাতের বিষবৃক্ষ রোপিত করে, দূর থেকে সেই বিষবৃক্ষ থেকে নির্গত হওয়া বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করে প্রতিপক্ষের প্রাণ সংহারের বিকট চিৎকার ও কান্নার শব্দের ভেতর তারা এক পৈশাচিক আনন্দ উৎসবের আমেজ অনুভব করে। আবার যখন সেই বিষবৃক্ষ থেকে নির্গত হওয়া বিষের তীব্রতা বাতাসে মিশে গিয়ে ভাসতে ভাসতে তাদেরও প্রাণ সংকটের কারণ হিসেবে উপনীত হয়, তখন তারাই আবার সংঘাত এড়াতে বিভিন্ন পথের সন্ধান করতে থাকে; কারণ আর যাই হোক, নিজের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন তো শান্তির পথ খোঁজা ছাড়া উপায় থাকে না।

সেই যে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যেন মৃত্যুর বীভৎস উৎসবে নৃত্য করছে অন্ধকারে ডুবে থাকা পিশাচের দল। রক্ত প্রবাহের প্রতিযোগিতায় যেন এগিয়ে থাকার সংগ্রামে সবাই জোটবদ্ধ হয়ে তীব্রবেগে দৌড়ে নামছে রক্ত-ঝরানোর প্রতিযোগিতায়। মানুষ হয়ে উঠেছে মানুষের শত্রু। অন্যদিকে শৃগালের দল পুলকিত বুভুক্ষুতা নিয়ে অপেক্ষা করছে মানুষের শরীর ভক্ষণের জন্য। মানুষের প্রাণ মানুষ কেড়ে নিচ্ছে অট্টহাসির মাতম তুলে। তবুও ঘুম ভাঙছে না কারও, তবুও মুদিত চক্ষুর ভেতর জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হচ্ছে না কারওই। এমনই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো পৃথিবীর সব শান্তিকামী মানুষ ট্রাম্পের ভেতরই শান্তি প্রতিষ্ঠার অবতারিক স্নিগ্ধ হস্ত দেখার চেষ্টা করছেন। সবাই চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কোনো উপায়ে পৃথিবীর এই সাংঘর্ষিক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষভাবে কাজ করবেন। পৃথিবীব্যাপী মনুষ্যসৃষ্ট স্বার্থসংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আকাশ জুড়ে যে ভয়ানক ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণসম মেঘ ঘনিয়েছে, সবার প্রত্যাশা ট্রাম্প সেই কালো মেঘপুঞ্জকে প্রেমের বাতাসে উড়িয়ে উড়িয়ে দরদ ও প্রেমের সমুদ্রের গভীরে নিক্ষেপ করবে। পৃথিবীর জমে থাকা সব হিংসা-বিদ্বেষের মধ্যে ঢেলে দেবেন শ্রাবণের অবিরাম শীতল প্রণয়ের বারিধারা।

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অন্য যে কোনোবারের নির্বাচনের চেয়ে বৈশ্বিক প্রয়োজনের দিক দিয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বরাজনীতির যে আধুনিক মেরুদণ্ডের নতুন মেরূকরণের হিসাব-নিকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক বেশি উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি একক ভূমিকা আমরা সর্বত্র ইতিপূর্বে লক্ষ করেছি। সে জায়গা থেকে পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিক নির্ধারণ ও পরিবর্তনের ক্ষেত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই আশা করব, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বিবেচিত সিদ্ধান্তগুলো পৃথিবীর সার্বিক মঙ্গল কামনায় বিবেচনা করবেন এবং কোনো একপক্ষীয় বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। তার ভেতর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ নামক অপযজ্ঞের যে দামামা বেজে চলছে তার অবসান ঘটানো। ইতিপূর্বে প্রথমবার যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন আমরা দেখেছিলাম যে, তিনি যুদ্ধ বা সংঘাত এড়িয়ে শান্তির স্নিগ্ধ পথকেই অধিক অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং ধ্বংসের বিপরীতে তিনি প্রেম এবং আনন্দকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছিলেন। এখন দেখার বিষয়, তিনি কতটা দৃঢ়তার সঙ্গে পৃথিবীর এমন ভয়াবহ সংঘাতপূর্ণ অবস্থাকে সামলে নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সহনশীলতার দিকে এগোতে পারেন। ট্রাম্পের সঠিক ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, ঠিক তেমনি কোনো প্রকার ভুল ও অবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্তও পৃথিবীকে আরও বেশি ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমরা আশা করব, তিনি যথার্থ বিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে শান্তি, ঐক্য ও প্রেমপূর্ণ সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণের জন্য সবার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করবেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

‘স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ মানুষের ভালো থাকার জন্য হতে হবে’

ভারতে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ

লুকিয়ে রাখা ২৯ কেজি ওজনের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩ 

হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে ৩ দাবি

যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে মাঠে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে ‘সোনারগাঁ’ : মামুনুল হক

‘এ দেশে আ.লীগের নেতাকর্মীদের ভাত নেই’ 

ফিল্ম আর্কাইভে জাতীয় চলচ্চিত্র সংসদের সম্মেলন

১০

‘শাহবাগে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে জুলাই গণহত্যার ডকুমেন্টারি’

১১

নাসিরনগরে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষক নিহত 

১২

‘সবাইকে কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে একযোগে কাজ করতে হবে’

১৩

ভারতের ৩৬ জায়গায় পাকিস্তানের ৪০০ হামলা

১৪

কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

১৫

অভিযোগও ভারতের, রায়ও ভারতের, হামলাও ভারতের : পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র

১৬

আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

১৭

ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায় : সারজিস

১৮

‘এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, জণগণের’

১৯

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল আরও এক মুসলিম দেশ

২০
X