টঙ্গীসহ গাজীপুর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ক্রমেই মারাত্মক আকার নিচ্ছে। ঢাকার লাগোয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে যানবাহনের চাপ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে, আর সেই চাপই রূপ নিচ্ছে মৃত্যুফাঁদে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই- মাত্র সাত মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৮টি বড় দুর্ঘটনায় ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে কালিয়াকৈরের বড়চালা এলাকায় মাওনাগামী মোটরসাইকেলচালক গৌরাঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল (৫০) বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী অজ্ঞাত যানবাহনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এর আগে ১৮ জুলাই একই এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের মা-বাবা ও ১২ বছরের সন্তানসহ স্থানীয় আরও একজন প্রাণ হারান। আহতদের মধ্যে দুজন পরে হাসপাতালে মারা যান।
১০ জুলাই শ্রীপুর ও টঙ্গীতে পৃথক দুর্ঘটনায় সাবেক ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রাজিবসহ দুজন নিহত হন, আহত হন অন্তত ২৫ জন। ৩০ মার্চ ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংযোগস্থলে দুটি দুর্ঘটনায় এক দম্পতিসহ চারজন নিহত হন। বছরের শুরুতে, ১৯ জানুয়ারি টঙ্গীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাংবাদিক মিনহাজুল কবির ও তার সহযাত্রী প্রাণ হারান। বছরের অন্যান্য সময়ে শ্রীপুর, কোনাবাড়ী, কালীগঞ্জ ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পরিবহন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালানো, মোটরসাইকেল চালকদের আইন অমান্য, হেলমেট ও সুরক্ষা বেষ্টনী ব্যবহার না করা, সড়কের নকশাগত ত্রুটি এবং পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব। তারা মনে করেন, গাজীপুরের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় দ্রুত স্পিডব্রেকার স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও গতিনিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি চালু করা এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা জরুরি।
পরিবহন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গাজীপুরে দুর্ঘটনার হার কমাতে হলে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, প্রয়োগে কঠোরতা আনতে হবে। শিল্পাঞ্চল এলাকায় ভারী যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ, মোটরসাইকেল চালকদের লাইসেন্স যাচাই এবং রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন