কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

সুধীর চক্রবর্তী

স্মরণ
সুধীর চক্রবর্তী

সুধীর চক্রবর্তী বাঙালি অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক, গবেষক ও লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ। বাংলার লোকগান, লোকভাষাকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদুয়ারে। ঔপনিবেশিক গদ্যের ধাঁচকে তিনি সম্পূর্ণ তার নতুন আখ্যান রচনার ধারা দিয়ে পাল্টে দিয়েছিলেন। প্রবন্ধ মানেই যে একটা গুরুগম্ভীর ভাব, এই ভাবনাটি সুধীর চক্রবর্তী নিজের লাবণ্যময় আর রসালো গদ্য ভাষা দিয়ে পাল্টে দিয়েছেন। ‘গভীর নির্জন পথে’র মতো অনবদ্য সব গ্রন্থের জন্য বাংলা সাহিত্যে তিনি থাকবেন অমর হয়ে। সুধীর চক্রবর্তীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে ১৯৩৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। তবে কলকাতার সঙ্গে ছোট থেকেই ছিল এক আত্মার সম্পর্ক।

কিশোর বয়স থেকেই বেড়ে ওঠা হাওড়ার শিবপুরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করেছেন গবেষণা, পিএইচডি। তারপর পেশা হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনাকে। গান শোনা, গাওয়া আর গান নিয়ে লেখালেখি ছিল তার নেশা। দীর্ঘ চার দশক লৌকিক গৌণধর্ম বিষয়ে সরেজমিন সন্ধান করেছেন। সাহেবধনী, বলরামী, কর্তাভজা ও লালনপন্থিদের সম্পর্কে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ তিনি। ১৯৯৯ সালে ভাষণ দেওয়ার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকার টেক্সাসের আর্ভিং শহরে। গবেষণা হোক কিংবা লোকসমাজ, আদিবাসীদের যাপনচিত্র অনুসন্ধানে বারবার তিনি ছুটে গেছেন প্রান্তিক অঞ্চলে। দিন কাটিয়েছেন মাটির গন্ধঘেঁষা মানুষের সঙ্গে। বিশেষ করে লোকসংস্কৃতি, লোকসংগীতের ওপর করেছেন দীর্ঘ অনুসন্ধান। রবীন্দ্রনাথ থেকে লালন, বাউল সংস্কৃতি থেকে গ্রাম বাংলার মৃৎশিল্প, চিত্রকলা সবকিছুই বারবার হয়ে উঠেছে তার গবেষণার বিষয়। গবেষণা ও রচনার পাশাপাশি করেছেন দীর্ঘদিন সম্পাদনার কাজও। কৃষ্ণনগর থেকে ১২ বছর ধরে প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি ও মননের পত্রিকা ধ্রুবপদ। ৩০টিরও বেশি বই লিখেছেন সুধীর চক্রবর্তী। গবেষণামূলক প্রবন্ধের পাশাপাশি লিখেছেন মৌলিক রচনা এবং আখ্যানধর্মী বেশ কিছু গ্রন্থ। তার রচিত মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘গভীর নির্জন পথে’, ‘লালন’, ‘পঞ্চগ্রামের কচড়া’, ‘আখ্যানের খোঁজে’, ‘বুদ্ধিজীবীর নোটবই, ‘রবিকর রেখা, ‘বাউল ফকির কথা’, ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’ প্রভৃতি। ‘বাউল ফকির কথা’ গ্রন্থটির জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। দীর্ঘ অধ্যাপনার জীবন থেকে অবসরের পরও ছেদ পড়েনি শিক্ষকতার সঙ্গে। অবসরের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর তুলনামূলক সাহিত্য পড়িয়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগে পড়িয়েছেন অতিথি অধ্যাপক হিসেবে। শহুরে জীবনের সঙ্গে গ্রামবাংলার প্রকৃতির মধ্যে বন্ধনের সেতু নির্মাণ করেছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। বাংলার মননে সংস্কৃতির জাল বুনে দিতে শেষ বয়স পর্যন্ত কলম ধরে রেখেছিলেন তিনি। বার্ধক্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েও চালিয়ে গেছেন সাহিত্য রচনার কাজ। সুধীর চক্রবর্তীর জীবনাবসান ঘটে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৮৬ বছর বয়সে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়ে মির্জা গালিবের পোস্ট

মায়ামিতে হতে যাচ্ছে লা লিগার ম্যাচ!

বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় গেলে দেশে চাঁদাবাজি বাড়বে : চরমোনাই পীর

আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা বিতর্কে বিসিবি থেকে বাদ ইসফাক আহসান

সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে যা বললেন আমিনুল

১৩ বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায় গাজীপুরবাসী

সুন্দরবনে ভেসে গিয়ে বেঁচে ফিরলেন কুয়াকাটার পাঁচ জেলে

শিশু হত্যার দায়ে একজনের ৭ বছরের কারাদণ্ড

সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

১০

যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূতের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক

১১

পাইকগাছা রিপোর্টার্স ইউনিটির দ্বি-বার্ষিক কমিটি গঠন

১২

বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের

১৩

গুগলে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য জানার ৭ কৌশল

১৪

পুনরায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হলেন মনজুর আলম

১৫

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আ.লীগ নেতা ও তার ছেলের ইলিশ শিকার

১৬

কবরস্থান-মসজিদ রক্ষায় রেলকর্মীদের আলটিমেটাম

১৭

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার / এককভাবে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী তারেক রহমান

১৮

চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যের প্রতারণা, সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার

১৯

কোরআনে হাফেজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

২০
X