আর মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা দিন বাকি। তার পরই আমরা পেতে যাচ্ছি নতুন আরেকটি বছর দুই হাজার পঁচিশ। নতুন বছর সবার জন্য আরও বেশি সুন্দর হোক, এটাই প্রত্যাশা। মূলত যে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে আমাদের থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আমরা যেটা নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য যে একটা আনন্দ উৎসব করি। সেই থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে সম্প্রতি একটা প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসা একটি বাস্তব গল্পের চরিত্র শিশু তানজিম উমায়ের। আমরা অনেকেই হয়তো তার নাম শুনেছি। আতশবাজির শব্দে মানে থার্টি ফার্স্ট নাইট যে আমরা উৎসব করি, আতশবাজি বিভিন্ন জায়গায় রাতের বেলায় যে পরিমাণে ফোটানো হয়, এরকমই আতশবাজির শব্দে চার মাসের শিশু উমায়ের মারা যায়। কেন মারা যায়, শিশু উমায়ের? কারণ হচ্ছে ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দে শিশু উমায়ের হার্টফেল করে।
আমাদের এই আনন্দ উৎসব কিছু মানুষের জীবনে কতটা দুঃখ-কষ্ট বয়ে নিয়ে আসে বা কতটা ভয়ংকর হতে পারে? সামান্য একটা উৎসব কতটা ভয়ংকর হতে পারে? সেটা আপনারা ওই প্রতিবেদন দেখলে বুঝতে পারবেন।
গত বছর ঢাকার ১০টি জায়গায় ফানুসের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দে পাখিরা সব হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় যে পাখির অভয়ারণ্য রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে পাখিরা সব উড়ে যায়। এখানে আমার মনে হয়েছে যে, এই বার্তাটা দিতেই পারি—সামান্য মানে খুব সাময়িক একটা আনন্দ আমাদের। হয়তো বা ১০-১৫ মিনিট আমরা আতশবাজি ফোটাই, ফানুস উড়াই। এ ধরনের একটা আনন্দ উৎসব করি থার্টি ফার্স্ট নাইট। খুব সাময়িক, এই সাময়িক আনন্দ এটা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে? কত মানুষের জীবনে, কত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে? বা আমাদের এই সাময়িক আনন্দ, আমাদের পুরো শহরকে কতটা শঙ্কার দিকে নিয়ে যায়?
এ বিষয়গুলো কিন্তু আমরা কখনোই চিন্তা করি না এবং আমরা চিন্তা করতে চাইও না। কারণ আমাদের কাছে মনে হয় যে, আসলে আমাদের তো আনন্দ-উৎসব করার সুযোগ খুব কম হয়। তাই আমরা যখনই এ ধরনের কোনো ইভেন্ট আমাদের সামনে আসে, আমরা তখনই সেটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই উপভোগ করতে গিয়ে আমরা এমন কিছু করে ফেলি, যেটার পরিণতি অনেক ভয়ংকর হয়। এ ছাড়া আমাদের মেট্রোরেলেও ফানুস আটকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টা, এরকম ঘটনাও ঘটেছে।
সেক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় যে, এ ব্যাপারটায় আমাদের খুব বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা এমনিতেই একটা ভয়াবহ দূষিত নগরীতে বাস করছি। কারণ ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ অনেকটাই তীব্র। সেই তীব্র দূষণের মধ্যে এর তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা আমাদের, আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি তাদের সচেতন নাগরিক হিসেবে এ ব্যাপারটা আসলে খেয়াল রাখা উচিত।
আমরা আনন্দ-উৎসব করব। একটি ইভেন্ট থার্টিফার্স্ট নাইট নতুন বছরকে আমরা বরণ করতে যাচ্ছি, সেটাকে উপভোগ করব; কিন্তু আমরা আমাদের আনন্দ-উল্লাস এমন হবে না বা আমাদের উৎসবটা এমন হবে না, যেটা পুরো শহরের অনেক বড় একটা ক্ষতি করে, যা আমাদের আশপাশের মানুষজনের অনেক বড় একটা ক্ষতি করে। আজ শিশু উমায়েরের পরিবার যেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কাল আমার-আপনার জীবনেও যে এরকম করতে পারে না সেটার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই।
সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আমি এটাও বলতে চাই, যে প্রতিটি দেশেই এ দিনটিতে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ১২টার পর নতুন বছরটিকে খুব সুন্দর করে বরণ করা হয়। সব দেশেই বিভিন্ন উৎসব আয়োজন থাকে এবং সবাই মিলে নতুন বছরকে বরণ করার যে একটা রীতি, এটা সব দেশেই থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের এখানেও আমি চাই না যে, এ আয়োজনটা মানে এই উৎসব আয়োজনটাও কেউ উপভোগ না করুক। মানে সচেতন থাকতে গিয়ে কেউ উপভোগ করবে না এরকমটা যেন না হয়। সেক্ষেত্রে কিন্তু শহরের কয়েকটা জায়গায় সরকারিভাবে বা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বা যারা বিভিন্ন অর্গানাইজার আছে তারা মিলে কয়েকটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে সেই জায়গাগুলোয় এ আয়োজনগুলো করতে পারি।
তাহলে যেটা হবে যে, সে জায়গাগুলোয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হবে এবং জায়গাগুলোকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা হবে। যেন সেখানে আতশবাজি বা ফানুস উড়ালে, যেন কোথাও কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে বা কোথাও কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা না থাকে। পাশাপাশি যারা এই উৎসব আয়োজনে অংশ নিতে চাই, তারা সে জায়গাগুলোয় এসে বিভিন্ন পয়েন্টে যেতে পারবেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে। তারা সেখানে গেলেন, যেখানে তারা সবার সঙ্গে এই উৎসব আয়োজনে শামিল হলেন। এরকম যদি একটা সিস্টেম করা যায়, এরকমভাবে যদি আসলে খুব পরিকল্পিতভাবে এ উৎসব আয়োজনগুলো করা যায়। তাহলে আমার কাছে মনে হয় যে, একই সঙ্গে মানুষ নতুন বছরকে বরণও করতে পারল বেশ একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে।
পাশাপাশি যেসব দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হয়, সেই আয়োজনগুলোকেও আমরা অনেকখানি প্রতিরোধ করতে পারি। আপনারা সবাই থার্টিফার্স্ট নাইটে একটু সচেতন হবেন, যেন আপনার খুব সাময়িক আনন্দের কারণে বা সাময়িক আনন্দের জন্য যেন অন্যের দুর্ঘটনার কারণ না হয় বা অন্যের দুঃখের কারণ না হয়।
সর্বোপরি থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি না ফোটাই। আতশবাজি ফোটানোর শব্দ আর আগুনের ফুলকিতে পাখি, প্রজাপতিসহ প্রচুর কীটপতঙ্গ মারা যায় এবং ডিমের ভেতরের বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। চারপাশে এত এত প্রাণ হত্যা করে অসুস্থ আনন্দের প্রয়োজন আছে কি? সবাই ভালো থাকবেন এবং নতুন বছর সবার জন্য আরও অনেক বেশি আনন্দের হোক, এটাই প্রত্যাশা। অগ্রিম শুভ নববর্ষ।
এস এম রাহমান জিকু, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ