আজহার মাহমুদ
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ এএম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সচিবালয়ে আগুন

অপরাধীরা ধরা পড়বে?

অপরাধীরা ধরা পড়বে?

আগুন কখন কোথায় লাগবে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ভবনেও আগুন লাগতে পারে, সেটা ভাবা একটু কঠিন বৈকি। গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড সে ভাবনাই বাস্তবে পরিণত হলো। একই সঙ্গে এ সময়ে এসে একটা জাতির কাছে চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন, যেখানে সংবেদনশীল নথি ও কাগজপত্র সংরক্ষিত থাকে, সেখানে এমন একটি ঘটনা বেশ সন্দেহজনক। এর পেছনে যে কোনো গাফিলতি বা ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, অনুমান করাই যায়। প্রশ্ন হলো, অপরাধীরা ধরা পড়বে তো? নাকি এটি সময়ের আবর্তে হারিয়ে যাবে?

সংবাদমাধ্যমের খবর, আগুন লেগেছে একটি নির্দিষ্ট দপ্তরে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চরমে পৌঁছে যায়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এটি হয়তো বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে হতে পারে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে, সচিবালয়ে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ঘাটতি বহুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। ঘটনার সময় সচিবালয়ে উপস্থিত কর্মচারীদের একটি অংশ জানিয়েছে, আগুন লাগার পরপরই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। জরুরি সিঁড়িগুলোর ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। অনেকেই সঠিক নির্দেশনার অভাবে নিরাপদে বের হতে দেরি করেন। এটি আমাদের দেশের সরকারি ভবনগুলোর জরুরি ব্যবস্থাপনায় যে বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস করা হওয়া হয়েছে কি না, এ সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অন্যদিকে, সচিবালয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনাগুলো শুধু একটি দপ্তর বা কাজের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে না; এটি পুরো প্রশাসনিক কাঠামোকে নাড়া দিয়ে যায়। যারা জনগণের সেবায় কাজ করার শপথ নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে এমন গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের আস্থার জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকার এরই মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, দায়ীদের খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে। তবে পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় এ ধরনের তদন্ত প্রায়ই দীর্ঘায়িত হয় এবং অপরাধীরা ধরা পড়লেও শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আশা করি এ সরকার নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছু দেখাবে। জনগণ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি চায়। সচিবালয়ে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু ভবন বা নথির ক্ষতি নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য এবং পেশাদারিত্ব অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় আমরা দেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো রাজনৈতিক চাপ কিংবা প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। এ ছাড়া অপরাধীদের শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মচারীদের সাক্ষ্য নেওয়া ও ঘটনার আগে-পরে কাদের যাতায়াত ছিল, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি। এ ধরনের তদন্ত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিচালিত না হলে জনগণের মধ্যে প্রশাসনের ওপর আস্থার অভাব তৈরি হয়। জনগণ আশা করে, সরকার এ ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

এ ঘটনার বিচার কী হবে, কেমন হবে, আদৌ অপরাধীদের ধরা সম্ভব কি না, সেই বিষয়টা সময়ের ওপর ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এ ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রশাসনিক ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা অপ্রতুল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা জরুরি। প্রতিটি সরকারি ভবনে নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া, উন্নত ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা এবং কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ ছাড়া জরুরি নির্গমন পথগুলো সবসময় খোলা ও ব্যবহার উপযোগী রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সতর্কতা ও কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো ভবনে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব শুধু ওই ভবনেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি পুরো প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নিয়ে আসে। অন্যদিকে, ভবনের নকশা থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কার্যক্রম পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরোনো ভবনগুলোতে অবকাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন ভবন তৈরির সময় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা উচিত।

পরিশেষে বলতে চাই, সচিবালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন অগ্নিকাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তা ও সুশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা নড়বড়ে করে দেয়। অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা না হলে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। আমাদের প্রশাসনিক ভবনগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া এ ধরনের ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব নয়। সচেতনতা ও জবাবদিহির অভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আজহার মাহমুদ

খুলশী-১, চট্টগ্রাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১০

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১১

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১২

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৩

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৪

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৫

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৬

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৭

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৮

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৯

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

২০
X