দেশে প্রথমবারের মতো মানবদেহে ব্যাট-রিওভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের দেহে এর অস্তিত্ব পায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। দেশে প্রথমবার রিওভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। রিওভাইরাসের ৯টি ধরন হয়। এর মধ্যে ৪টি মানবদেহে পাওয়া যায়। বাকিগুলোর অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত মানবদেহে পাওয়া যায়নি। আর রিওভাইরাসেরই একটি ধরন ব্যাট-রিওভাইরাস, যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেছে। রিওভাইরাসের উপস্থিতি বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই আছে। রোটা ভাইরাসও রিওভাইরাসের একটি ধরন, যেটিতে আক্রান্তের কথা দেশে সচরাচরই শোনা যায়। তবে ব্যাট-রিওভাইরাস দেশে প্রথম। এ ভাইরাসের উপস্থিতি সাধারণত বাদুড়ে পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে এসেছে, যেন এটি বাংলাদেশে বড় কিছু। কিন্তু যেই পাঁচজনের মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল, তারা খুব স্বল্প সময়ের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সুতরাং এটা খুব বেশি উদ্বেগের বিষয় নয়। আইইডিসিআর জানিয়েছে, খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে প্রতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন অনেকে। তেমন লক্ষণ দেখে সম্প্রতি ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। তাদের মধ্যে নিপাহ ভাইরাস না মিললেও পাঁচজনের শরীরে পাওয়া গেছে রিওভাইরাস। নতুন রোগজীবাণু অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আইইডিসিআরের নিয়মিত গবেষণায় এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রিওভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। আক্রান্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। গুরুতর হলে নিউমোনিয়া, এমনিক এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। দেশে অনেক এনকেফালাইটিস রোগী পাওয়া গেছে; কিন্তু কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই গবেষণা এসব রোগীর চিকিৎসায় কাজে দেবে।
বিশ্বে প্রথম রিওভাইরাস শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালে। শীতকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। তবে এই ভাইরাস শিশু ও বয়স্কদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রাণঘাতীও হতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাই নতুন রিওভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয় বরং সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। কেননা, এই ভাইরাস সংক্রমণ কারও কারও ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, এমনকি এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। রিওভাইরাস প্রতিরোধের জন্য টিকা আছে, যা শিশুদের জন্য দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া হাত ধোয়া, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও খাবারের সুরক্ষা এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।
আমরা মনে করি, ভাইরাসজনিত কোনো রোগকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। এই ভাইরাস প্রাণঘাতী না হলেও পীড়াদায়ক। সচেতনার অভাবে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মধ্যে যেদি এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতার কথা কারও অজানা নয়। অন্যদিকে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন কোনো জটিলতার সৃষ্টি যাতে না হয়, এজন্য সচেতন হওয়া প্রয়োজন।