কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫ এএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

উত্তর মেলে না

উত্তর মেলে না

বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন এবং তাদের শ্রমের অবমূল্যায়ন নিয়ে তীব্র বৈষম্যের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। অত্যন্ত বিস্ময়কর ও লজ্জাকর হলেও সত্যি, স্বাধীনতার পর দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত বিপুল পরিবর্তনের পরও তাদের জীবনে এর ছিটেফোঁটা যে লাগেনি, এমনটা বললে একটুও অত্যুক্তি হবে না বোধহয়।

গতকাল রোববার ছিল বিশ্ব গরম চা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কালবেলায় চা শ্রমিকদের নিয়ে ছিল বিশেষ আয়োজন। বিস্তারিত আয়োজনটিতে চা শ্রমিকদের যে জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাতে সংবেদনশীল মানুষমাত্রই স্তম্ভিত হবেন। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ (বিটিএ) ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে সর্বশেষ যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়, তা হচ্ছে তাদের সারা দিনের মজুরি ১৬৮-১৭০ টাকা! বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এ মজুরি এর আগে ২০১৯ সালে ছিল ১১৭-১২০ টাকা। পরে ২০২২ সালে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৬৮-১৭০। এই মজুরি পেতে হলে দিনশেষে ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয় মাথাপিছু। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেই কেবল ‘হাজিরা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গাছ ছাঁটার সময় সারা দিনে অন্তত ২৫০টি চা-গাছ ছাঁটতে হয়। আর কীটনাশক ছিটানোর বেলায় অন্তত এক একর জমিতে কীটনাশক ছিটানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয় তাদের।

খুব স্বাভাবিকভাবেই এ অল্প পয়সায় তাদের জীবনে মৌলিক চাহিদা মেটে না। শখ-আহ্লাদ, বছরের বিশেষ দিন ও ধর্মীয় আনন্দ-উদযাপন তাদের কাছে হয়ে ওঠে নিরানন্দ ও মন খারাপের সময়। অভাব-অনটনে জীবন হয় অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্ট। ফলে রোগব্যাধির বাসা হয়ে ওঠে তাদের শরীর। তাদের গর্ভজাতরা জন্মও নেয় নানারকমের অপুষ্টিজনিত রোগ নিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে—দেশে যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ম্যালেরিয়া ও জরায়ু ক্যান্সারের প্রবণতা চা শ্রমিকদের মধ্যে বেশি। মৌলভীবাজার জেলায় প্রতি বছর যে পরিমাণ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়, তার অন্তত ৩৬ শতাংশ চা জনগোষ্ঠীর মানুষ। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে গত চার বছরে ১৯ হাজার ৯১৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে শুধু চা বাগানের বাসিন্দা ৭ হাজার ২২০ জন (৩৬ শতাংশের বেশি)। কুষ্ঠ রোগের চিত্রটা আরও ভয়াবহ। গত চার বছরে মৌলভীবাজারে ৭৬১ কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়, তার ৬৩১ জনই চা বাগানের বাসিন্দা। মোট শনাক্তের ৮৩ ভাগই চা জনগোষ্ঠীর মানুষ। পাশাপাশি বিবিএসএর একটি জরিপ বলছে, অপুষ্টির কারণে চা বাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বকায়। ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়। স্বল্প ওজনের শিশু ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তা ছাড়া ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ কিশোরীর এবং মা হয়ে যাচ্ছে ২২ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা নেই ৬৭ শতাংশ পরিবারের। লিখতে থাকলে এ ফর্দ অনেক লম্বা হবে।

দেশের একটি শ্রমগোষ্ঠীর এ চিত্র যে স্বাভাবিক নয় এবং এটি যে একটি উপহাস, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন হচ্ছে, এ অস্বাভাবিকতার কারণ কী? এই শ্রমগোষ্ঠীর শ্রমমূল্য এমন কেন? একই দেশে বসবাস করে তাদের শ্রমমূল্য নিয়ে কেন এত বৈষম্য? এই অস্বাভাবিকতা কাটবেইবা কীভাবে? কারা দেখবেন এসব?—প্রশ্নগুলো কি খুব কঠিন? যদি কঠিন না হয়, তাহলে যুগের পর যুগ প্রশ্নগুলোর উত্তর কেন মিলছে না? কেন সুরাহা হচ্ছে না এ অবস্থার? আমরা সর্বান্তঃকরণে এবং যে কোনো উপায়ে এ বৈষম্যের নিরসন চাই। চা শ্রমিকদের জীবন এই ‘রাহুচক্র’ থেকে বের হোক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভূমিকম্প ঝুঁকি / গ্যাস কূপ খনন কার্যক্রম বন্ধ

তরুণদের নিয়ে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার অভিযানে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’

না ফেরার দেশে সাবেক খেলোয়াড় ও আম্পায়ার

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ল

জাতিসংঘ-বাংলাদেশ-মালদ্বীপের সমন্বিত উদ্যোগে অভিবাসী কল্যাণে নতুন সম্ভাবনা

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু

বুলবুলকে ‘বাংলার এরদোয়ান’ বললেন সাদিক কায়েম

ফেনীকে নতুন করে গড়তে চাই, সুযোগ দিন : মঞ্জু

৪৭তম বিসিএস / শাহবাগে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ

ভূমিকম্পে এক ভবনে হেলে গেল আরেকটি ভবন, এলাকায় আতঙ্ক

১০

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্ববাজারে বড় বিপদে ভারত

১১

‘আয়ারল্যান্ডকে অভিনন্দন, দারুণ ব্যাটিং করেছে তারা’

১২

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল

১৩

ভূমিকম্প আতঙ্ক : জবিতে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ

১৪

পদ্মার চর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

১৫

ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৭৮

১৬

যেসব সূক্ষ্ম লক্ষণে বুঝবেন শরীরে হয়েছে পুষ্টির ঘাটতি

১৭

সড়কে প্রাণ গেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের

১৮

জামায়াতের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না : ফারুক

১৯

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে যেসব এলাকায়

২০
X