পুরান ঢাকার শত বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী শিবমন্দিরটির পুনঃস্থাপন নিয়ে যে সংশয় বা অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, তা দুঃখজনক।
রোববার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের উত্তর পাশে ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পেছনে ছিল ছোট্ট একটি শিবমন্দির। স্থান সংকুলান না হওয়ায় গত বছর জুনে শতবছরের পুরোনো মন্দিরটির স্থানে জেলা প্রশাসনের অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য আয়রন শিটের একটি ভবনের কাজ শুরু হয়। সে সময় দীর্ঘদিন ধরে পূজা করা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা ভবনের পাশে মন্দির পুনঃস্থাপনের আবেদন জানান। আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান আশ্বাস দিয়ে মন্দিরটি স্থানান্তর করেন জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি ভবনের ছাদে। আয়রন শিটের ভবনের পাশে মন্দির নির্মাণের কাজও শুরু হয়। এরপর সাবেক ডিসি বদলি হয়ে যাওয়ায় আবেদনের পাঁচ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি কাজটি। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে মন্দির পুনঃস্থাপন চান সেখানকার সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৪ জুলাই মন্দির পুনঃস্থাপনের জন্য ঢাকা বারের সনাতনী আইনজীবী ও স্থানীয় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন জানান। আবেদনে তারা শিবমন্দিরটি সাত দিনের মধ্যে পূর্বের স্থানে পুনঃস্থাপনের জন্য আবেদন করেন। জানা যায়, মাটির প্রতিমাগুলো দিয়ে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি ভবনের ছাদে পূজার জন্য ঘর করা হয়েছে। তবে সেখানে কর্মচারীরা পূজা করলেও সরকারি ভবনের ছাদ হওয়ায় অন্যান্য পূজারী সবসময় পূজার জন্য সেখানে যেতে পারেন না। নতুন জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের দাবি, আয়রন শিটের ভবনের পাশে মন্দির পুনঃস্থাপন করা হোক। কেননা ছোট হলেও মন্দিরটিতে শাঁখারীবাজারসহ আশপাশের এলাকার সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা উৎসবমুখরভাবে পূজা করে আসছিলেন।
কিন্তু গোল বেঁধেছে বা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নতুন জেলা প্রশাসকের কথায়। মন্দির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, ওই স্থানে মন্দির ছিল কি না, তা তার জানা নেই। তিনি এসে ওই স্থানে শুধু ভবনের স্ট্রাকচার দেখেছেন। তার এ কথা একদিক দিয়ে সত্য। তিনি এখানে এসে যা দেখেছেন, তাই বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আগের জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায় অসম্পন্ন বা চলমান কাজগুলো নিশ্চয়ই তার বদলির সঙ্গে সঙ্গে সেখানেই ইতি টানা হয় না? নিয়মমাফিকই চলে। তার মানে সংশ্লিষ্ট অফিসের সমন্বয়হীনতাই এজন্য দায়ী বলে ধারণা করা যায়।
একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে দেশটির প্রাচীন পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ। প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক। সুতরাং এগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন নিজেদের স্বার্থেই। এ কাজের জন্য আমাদের দেশেও রয়েছে সরকারি ব্যবস্থা। তবে তা দুর্বল। দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মসজিদ-মন্দির-প্রাসাদ-মাজারসহ বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে তাদের উদাসীনতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। এটা বেদনার। সে অর্থে পুরান ঢাকার মন্দিরটি এক অর্থে পুরাকীর্তির নিদর্শনও ছিল বটে। সে কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। এখন যেহেতু মন্দিরটির সঙ্গে একটি ধর্মাবলম্বীর দীর্ঘদিনের আবেগ-অনুভূতির সম্পর্কের ব্যাপার এবং তাদের দাবি আগের মন্দিরের আশপাশে কোথাও একটি মন্দির তৈরি, এতেই তারা খুশি; সুতরাং সংশ্লিষ্টদের উচিত এবং দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করা। এর মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকেই সম্মান জানানো হবে। আমাদের বিশ্বাস, নতুন জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।