ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যা পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের মানুষের মধ্যে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বর্তমানে হাতে স্মার্টফোন থাকলেই প্রায় সবার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও থাকে। অনেকে আবার একাধিক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। সহজ ব্যবহারের কারণে ফেসবুক মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
ফেসবুক শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি এখন খবর জানা, মতামত প্রকাশ, বিনোদন উপভোগ এবং পেশাগত কাজেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ করে, চাকরির সন্ধানের ক্ষেত্রেও ফেসবুক ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। চাকরির বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ ব্যবহৃত হচ্ছে, যা একদিকে বেকারদের জন্য সুবিধাজনক। অন্যদিকে প্রতারণার ফাঁদও তৈরি হয় ফেসবুককে ব্যবহার করেই।
ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন ও প্রতারণার কৌশল: বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যক্তি ফেসবুকে চাকরির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে তাকালেই বোঝা যায় প্রতারণার ভয়াবহতা কতটা বেড়ে গেছে। একজন বড় ভাই সাংবাদিকতার চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রতারকরা তাকে নিশ্চিত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১৫০০ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে। এরপর তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়। একইভাবে করিম নামের এক যুবককে শিল্পকারখানায় সুপারভাইজার পদে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়। তাকে ঢাকায় এক নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলা হয়। সেখানে গেলে সে প্রতারকদের হাতে পড়ে। পরে তার পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে টাকা পাঠান। এরপর করিম মুক্তি পায়। এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে ঘটছে। বেকার যুবকদের চাকরির আশায় সহজেই প্রতারিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর প্রতারক চক্রগুলোও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন: ফেসবুকভিত্তিক প্রতারণা এখনই বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এটি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন চিহ্নিত করতে হবে। ফেসবুকে যেসব গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রতারণা করা হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে এ ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে। এ কাজে প্রতারকদের অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে ব্লক করাসহ ভুয়া বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেওয়া জরুরি। যারা চাকরির নামে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।
সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন: ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলেই তা বিশ্বাস করা ঠিক নয়। সন্দেহজনক চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো লেনদেন করা উচিত নয়। সরকারি ও নির্ভরযোগ্য চাকরির ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে তারা কঠোর হবেন। সাধারণ জনগণ যেন এমন প্রতারণার শিকার না হয়, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া দরকার। দেশের তরুণ সমাজের স্বপ্ন যেন এ প্রতারকদের কারণে ভেঙে না যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত তৎপরতা কাম্য।
মোহাম্মদ ছরোয়ার, শিক্ষার্থী
সরকারি আলাওল কলেজ
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
মন্তব্য করুন