কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ০৭:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় জালিয়াতি

মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় জালিয়াতি

মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন তুচ্ছ-জ্ঞান করে অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের বঞ্চনা-অসহায়ত্ব ও অভিযোগের কথা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রায়ই শোনা যায়। এবার টাঙ্গাইলে একজন মুক্তিযোদ্ধার খবর জানা গেল রোববার কালবেলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কল্যাণে। জাতির এ সূর্যসন্তান দুই যুগের অধিক সময় ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। অন্যদিকে জালিয়াতি করে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছেন আরেকজন—এমনটাই অভিযোগ। এ নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় আবেদন করে দিনের পর দিন ঘুরেও পাচ্ছেন না প্রতিকার। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

টাঙ্গাইলের বাসাইলের ঘটনা। ছবি পাল্টে জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ভাই খোরশেদ আলমের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করছেন তারই ছোট ভাই নবাব আলী। জানা যায়, উপজেলার ফুলকি মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে খোরশেদ আলম ১৯৯৭ সাল থেকে প্যারালাইজড। যে কারণে ছোট ভাইকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনের জন্য মাঝেমধ্যেই ঢাকায় পাঠাতেন খোরশেদ আলমের পরিবার। আর এ সুযোগে ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর নবাব আলী খোরশেদ আলমের স্বাক্ষর জাল করে নিজের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীর ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন। খোরশেদ আলমের মুক্তিযোদ্ধা সনদের গেজেট নং-৭২৩ এবং লাল মুক্তি বার্তায় নং-১১৮১০০২৬০। এদিকে নবাব আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জমি রেজিস্ট্রি, বিবাহ রেজিস্ট্রি ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নথিতেই রয়েছে তার নিজের নাম। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের কার্ডে রয়েছে খোরশেদ আলমের নাম। ভুক্তভোগী খোরশেদ আলমের পরিবারের অভিযোগ, এসব তথ্য গোপন থাকার অনেক বছর পর যখন তারা জানতে পারেন, নবাব আলী ভাতা নিজেই উত্তোলন করে খাচ্ছেন, তখন তারা নড়েচড়ে বসেন। সে সময় নবাব আলী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা অর্থাৎ খোরশেদ আলম বলে দাবি করেন। এ জালিয়াতি টিকিয়ে রাখতে তিনি এসএসসি পাস হওয়া সত্ত্বেও ভাতার টাকার তোলার জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস দেখান। যে কারণে তার এসএসসির সনদে নাম রয়েছে নবাব আলী। এ ছাড়া তার বিবাহ, জমি এবং এনআইডিসহ সব নথিতে উল্লেখ রয়েছে নবাব আলী। শুধু ভাতার ক্ষেত্রে তিনি বনে যান খোরশেদ আলম। এতকিছু প্রমাণ থাকার পরও যে তাদের সব দপ্তরে প্রতিকারহীন ঘুরতে হচ্ছে, এটা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। স্বভাবতই তারা মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের মর্যাদা ও সম্মানী ভাতা ফিরে পেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একজন অসহায় প্যারালাইজড মুক্তিযোদ্ধার পরিবার থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে যথাযথ উপায়ে অভিযোগ জানানোর পরও এর প্রতিকারে কেন এত বিলম্ব? আমরা মনে করি, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। রাষ্ট্রের সব স্তরে তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন তাদের প্রাপ্য। এরকম একটি সংবেদনশীল বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরও দিনের পর দিন অতিবাহিত হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতা আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, বাসাইলের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অতিদ্রুত তৎপর হবেন এবং বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সুরাহা করবেন। পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কে বেশি টাকা দেয়, ফেসবুক নাকি ইউটিউব

অর্ধ বিলিয়ন জরিমানা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প

মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে থানায় জিডি মহানগর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের

চাকরির নামে প্রতারণা, আমেরিকা প্রবাসী আটক 

শর্ত না মানলে ধ্বংস হবে গাজা সিটি : ইসরায়েল

নতুন করিডোর প্রকল্প শুরু করতে চায় চীন-পাকিস্তান

থানা হাজতে যুবকের মৃত্যু, এএসআইসহ ৩ পুলিশ প্রত্যাহার

চবিতে নিলস-সিইউ পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতা শনিবার

জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন হয়নি, কারণ জানাল পুলিশ

বাদশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি মেয়র শাহাদাতের 

১০

ঘুমাতে যাওয়ার কত আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত জেনে নিন

১১

ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ছাত্রসমাজ রুখে দেবে : আ স ম রব

১২

চমেকে ১০ চর্ম রোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ 

১৩

বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে : মাওলানা হালিম

১৪

আপনার শখের গাছের জন্য প্রাকৃতিক টনিক

১৫

শিগগির শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট : পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী 

১৬

ইউক্রেনের আরও ৩ গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার

১৭

মিষ্টিমুখে অস্বাস্থ্যকর চিত্র, জরিমানা এক লাখ

১৮

‘মব’ করে তিন কিশোরকে বেঁধে বেধড়ক পিটুনি, নিহত ১

১৯

শিমুল বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, দেখতে গেলেন ডা. রফিক

২০
X