মোহাম্মদ আনোয়ার
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংস্কারের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

সংস্কারের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

বিশ্ব রাজনীতি যখন সহিংসতা, দমননীতি ও বিভক্তির পথে এগোচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা করছে একটি স্থিতিশীল, ন্যায়ের ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—এটি কি প্রয়োজনীয় সংস্কারের সাহসী পদক্ষেপ, নাকি একটি রাজনৈতিক সময় ব্যবস্থাপনা?

একটি অংশ মনে করে, চলমান উদ্যোগগুলো যদি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা হতে পারে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আরেক অংশ মনে করে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি ও আস্থার সংকট সংস্কারের গতিপথকে দুর্বল করে দিতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে এই কমিশন ৬৪টি সভা, ২২টি সংলাপ এবং জনমত বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি ৪৩০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রস্তাবনায় এসেছে—নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন থেকে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব দূরীকরণ।

তবে জনগণের ও সম্ভাবনাময়ী প্রার্থীদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হচ্ছে, জেলা পর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (যেমন জেলা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ) হাতে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। অতীতে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দিয়ে দায়িত্ব পালনে সেই আস্থার ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হতে পারে।

বাংলাদেশের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অহিংস ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায়—যেখানে ক্ষমতা পালাবদল হবে গণরায়ের মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।

একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়—এ সংস্কার প্রক্রিয়া কি বাস্তবায়িত হবে সময়মতো ও নিরপেক্ষভাবে? সরকার বলছে, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তি। বিরোধী মহল সংশয় প্রকাশ করছে। এ দ্বৈত অবস্থানে জনগণের চাওয়া হচ্ছে—পরিষ্কার সময়সীমা, বাস্তবায়নের গ্যারান্টি এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণ।

অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকার Truth and Reconciliation Commission-এর উদাহরণ টানেন, যেখানে জাতিগত বিভাজনের অবসান হয়েছিল রাজনৈতিক সাহসিকতা, অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। বাংলাদেশেও একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের দাবি উঠে আসছে—যেখানে সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন।

গণতন্ত্রের শক্তি তখনই প্রমাণিত হয়, যখন জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সবপক্ষ একসঙ্গে কাজ করে।

এই মুহূর্তে জনগণের প্রত্যাশা তিনটি বিষয়ের ওপর—১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা; ২. স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো; ৩. রাজনৈতিক সংলাপ ও অংশগ্রহণ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে তার চেয়েও বেশি জরুরি হলো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জবাবদিহি কাঠামো শক্তিশালী করা।

বাংলাদেশ আজ এক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে। একদিকে রয়েছে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্ভাবনা, অন্যদিকে রয়েছে অনাস্থা ও দমননীতির পুরোনো আশঙ্কা। এ প্রেক্ষাপটে সবপক্ষের দায়িত্ব—গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে একটি স্থায়ী, ন্যায়সংগত ও অহিংস গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা।

প্রশ্ন রয়ে যায়—আমরা কি সবাই প্রস্তুত সেই সম্মিলিত পথে হাঁটতে?

লেখক: দুবাই প্রতিনিধি

দৈনিক কালবেলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সবাইকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব: নীরব

‘হামজা আমার দলে হলে বেঞ্চেই বসে থাকত’

লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের সঙ্গে বাসস চেয়ারম্যানের মতবিনিময়

আফগানদের কাছে হারার পর যা বললেন মিরাজ

অল্প পুঁজি নিয়ে আফগানদের সাথে পারল না বাংলাদেশ

‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে’

রাবেতাতুল ওয়ায়েজীনের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের মতবিনিময়

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

১০

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

১১

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

১২

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

১৩

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

১৪

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

১৫

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

১৬

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

১৭

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

১৮

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১৯

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

২০
X