হৃদয় পান্ডে
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপরিহার্যতা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপরিহার্যতা

বিশ্ব বর্তমানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এক উত্তাল স্রোতের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রতিটি খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, এমনকি নীতিনির্ধারণ পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রই এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং উন্নয়নের ধারায় নিজেকে শক্ত অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাঠ্যক্রমে AI-এর সংযোজন এখন আর বিলাসিতা নয়; এটি সময়ের দাবি। দেশের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাভিত্তিক এবং অনেকাংশে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যখন বিশ্বজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা রোবোটিকস, মেশিন লার্নিং, ডাটা সায়েন্স ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করছে, তখন আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো অতীতপন্থি পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হবে। প্রযুক্তিনির্ভরতার এ যুগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী মনোভাব গড়ে তুলতে AI-এর সঙ্গে তাদের পরিচয় জরুরি। তাই আজ প্রয়োজন বাংলাদেশের পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী করে তোলা এবং তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক ধারণা ও ব্যবহারিক প্রয়োগ যুক্ত করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের তৈরি করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু প্রযুক্তি খাতেই নয়, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, উৎপাদন শিল্প, আর্থিক খাত, এমনকি সৃজনশীল শিল্পেও নতুন নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ, তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, দক্ষতার অভাবে এ তরুণ শক্তির একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যদি এখনই শিক্ষাব্যবস্থায় AI সংযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের এ নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে দেশব্যাপী বেকারত্ব আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এরই মধ্যে তাদের পাঠ্যক্রমে AI-বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করেছে। শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, মাধ্যমিক এমনকি প্রাথমিক শিক্ষাতেও শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর চিন্তা গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ যদি বৈশ্বিক শিক্ষা মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে চায়, তাহলে আমাদেরও এখনই এ ধারা অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দেওয়া, সিনিয়র পর্যায়ে প্রজেক্টভিত্তিক কাজের মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করানো এবং উচ্চশিক্ষায় গবেষণাভিত্তিক এটির শিক্ষা চালু করা জরুরি। এভাবে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলা গেলে তারা দেশ-বিদেশে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি ও গবেষণার সুযোগ লাভ করতে পারবে। পাঠ্যক্রমে এটির সংযুক্তি শুধু প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে না, বরং শিক্ষার মানও বহুলাংশে উন্নত এবং বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অগ্রসর করবে।

AI শুধু সম্ভাবনার দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়; এর সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে নৈতিকতা, নিরাপত্তা এবং সঠিক ব্যবহারের প্রশ্নও। বিশ্বব্যাপী এখন এটির ব্যবহারে তথ্যের গোপনীয়তা, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো, অটোমেশনজনিত কর্মসংস্থান হারানো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ যদি এখন থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর ব্যবহারের নৈতিক দিকগুলো শেখানোর ব্যবস্থা না করে, তাহলে ভবিষ্যতে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে নানা সামাজিক ও নৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে। তাই পাঠ্যক্রমে এর সংযুক্তির সময় শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, এর নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্বের অগ্রসরমান প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের জন্য আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত সংযুক্ত করা এখন অপরিহার্য দাবি। পাঠ্যক্রমে AI যুক্ত করলে শিক্ষার্থীদের শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়বে না, তাদের বিশ্লেষণী চিন্তা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও নৈতিকতা বোধও গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন সহজতর হবে। এটি হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই এখনই সময়, শিক্ষা নীতিমালায় যুগোপযোগী পরিবর্তন এনে সৃজনশীল ও নৈতিকভাবে দক্ষ একটি তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার।

হৃদয় পান্ডে

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১০

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১১

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৩

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৪

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৫

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৬

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৭

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১৮

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৯

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

২০
X