বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের কোনো দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। একশ্রেণির মিল মালিক বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৩৯ জাতের ধান ছেঁটে ‘মিনিকেট’ বলে বাজারজাত করতে শুরু করেন ১৯৯৫ সালের দিকে। আর এখন মোটা-লম্বা জাতের ধান, বিশেষ করে বিআর-২৮ জাতের ধান রাবার রোলারে ক্রাশিং করে মিনিকেট নামে বাজারজাত করছেন চালের মিল মালিকরা। মেশিনে প্রক্রিয়াজাত এসব চাল বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। দেখতে ঝকঝকে ও চিকন এই চালের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে মিনিকেটের রমরমা ব্যবসা। ‘মিনিকেট প্রতারণা’ নিয়ে ২০১৫ সালেও নড়েচড়ে বসেছিল সরকার। ২০২৩ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন সরকার একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনে চালের বস্তার গায়ে মিনিকেটের মতো ভিন্ন নাম লিখলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দণ্ডের বিধান রাখা হয়। আইনটি প্রণয়নের দুই বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বাজারে মিনিকেটের রমরমা ব্যবসা চলছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও বাদামতলীতে বেশিরভাগ চালের আড়ত। এই দুই বাজার থেকেই সারা ঢাকা শহরের অলিগলিতে ছোটখাটো দোকানের মাধ্যমে ভোক্তাদের ঘরে পৌঁছে যায় চাল। কৃষি মার্কেটে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও শেরপুরের বিভিন্ন কোম্পানির হরেক রকমের মিনিকেট চালে ভরা প্রায় সব আড়ত। এসব আড়তে বিভিন্ন রাইস মিল থেকে চাল উৎপাদিত হয়ে মিনিকেট নামেই প্যাকেটের গায়ে লেখা চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
এর আগে গণমাধ্যমে অনেকবার বেশ গুরুত্বের সঙ্গে মিনিকেট চাল বানানোর যান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। অটো রাইস মিলে অতিবেগুনি রশ্মিযুক্ত রোলার ক্রাশিং মেশিন রয়েছে। প্রথম ধাপে ডিজিটাল সেন্সর করা হয়। অর্থাৎ চাল থেকে সব কালো বা নষ্ট চাল, পাথর, ময়লা সরিয়ে ফেলা হয়। দ্বিতীয় ধাপে বয়লার ইউনিটে চালের উপরি ভাগের বাদামি আবরণ তুলে ফেলা হয়। তৃতীয় ধাপে কেমিক্যাল মিশিয়ে সাদা করা হয় চাল। চতুর্থ ধাপে ক্রাশিং করা হয়। পঞ্চম ধাপে স্ট্রিমিং এবং ষষ্ঠ ধাপে কাটিং ও সপ্তম ধাপ পলিশ করা হয়। অর্থাৎ সাতটি ধাপে চাল ধবধবে সাদা রঙ ও সরু আকৃতি ধারণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত পালিশের কারণে চালের গায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন—ভিটামিন বি১, বি৬, আয়রন ও ফাইবার অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে, যা ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি করে।
কিন্তু সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো ধরনের ভাতই শরীরের নানা রোগের কারণ হয়ে উঠছে। ভাতে ডাইজেসটিভ ফাইবার নেই। ফলে এটি শরীরে তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের বারবার খিদে পায়। বারবার খাওয়ার এই প্রবণতাই শরীরের ওজনকে বাড়িয়ে দেয় অনেকটা। ভাত রক্তে সুগার লেভেল দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রয়োজনের বেশি ভাত খাওয়ায় রাশ টানতে না পারলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে বাসা বাঁধবে বিভিন্ন রোগ। ভাতের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা কমাতে অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার চার ঘণ্টা আগে ভাত খেয়ে নিতে পারেন।
যাই হোক, মিনিকেট চাল অনেক দিন ধরেই নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনা জারি আছে। অনেক বিস্তৃত এই চালের বাজার। এর বিকল্প জোগান নিশ্চিত না করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই মিনিকেটের বিকল্প স্বাস্থ্য ঝুঁকিবিহীন চালের জোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন