ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দলের সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থক এখন দিশেহারা। শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশ পলাতক, অন্যরা আত্মগোপনে। এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। ফলে সে কাজটাই এখন বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে করছেন তারা। লাজ-লজ্জার ধার তারা ধারছেন না।
খবরে প্রকাশ, আওয়ামী লীগের গুজব তৈরির কারখানা হিসেবে খ্যাত সিআরআইর দায়িত্ব এখন ক্ষমতাচ্যুত পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে। অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার আক্রমণের পেছনে কাজ করছে আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (সিআরআই)। আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শীর্ষ রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা ও সামরিক-বেসামরিক আমলাসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দিয়ে তৈরি ভিডিও ক্লিপ, বেনামি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে সিআরআই এক ধরনের সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এক কথায়, জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিআরআই আওয়ামী লীগের গবেষণা, তথ্য কার্যক্রম পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ, প্রচার-প্রচারণার কাজের কথা বলা হলেও আদতে এখন ভিন্ন কাজ করছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিস্ট যাদের বলা হয়, তাদের সংগঠিত করে কাজে লাগানোর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এজন্য এ তালিকার টকশোর জনপ্রিয় মুখ, সিনিয়র সাংবাদিক, ইউটিউবার, অনলাইন অ্যাকটিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বুদ্ধিজীবীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সিআরআইর দিল্লির এ কার্যালয় থেকেই এসব ছদ্মবেশী কালচারাল ফ্যাসিস্টকে নানা কৌশলে কাজে লাগাতে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড় করানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত করার নামে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী কালচারাল শক্তিকে জড়ো করা, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়ানো এবং সর্বোপরি সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশকে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব শক্তিকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা।
গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেনাবাহিনীকে নিয়েও। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি গুজবের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পুরো সেনাবাহিনী সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সব ধরনের গুজব ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনী সতর্ক রয়েছে।’ এদিন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সেনাপ্রধান প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন এ ধরনের কোনো তথ্য তার জানা নেই। তিনি দু-একটি পত্রিকায় এটি দেখেছেন। আর অনলাইনে এটি নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জন হয়েছে, দেখেছেন। এসব গুজব-গুঞ্জন নিয়ে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই।
আমরা সবাই জানি, সত্য চিরদিনই সত্য। পাশাপাশি মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে। মিথ্যা অনেক সময় মানুষকে সাময়িকভাবে প্রলুব্ধ, বিভ্রান্ত এবং প্রভাবিত করতে পারে। তবে শেষ বিচারে তা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই তাদের উচিত গুজবের রাজনীতি পরিহার করা।
মন্তব্য করুন