ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে আসছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় গাজায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে তিনি প্রায়ই আক্ষেপ প্রকাশ করতেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ফেব্রুয়ারিতে গাজায় জাতিগত নির্মূলের পরামর্শও দেন ট্রাম্প। খবর আলজাজিরা
গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর তেল আবিবকে রক্ষায় যাবতীয় সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় যে ৬৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে তার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রও সরবরাহ করে আমেরিকা। এ ছাড়া গাজায় মৃত্যুর মিছিল বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও কূটনৈতিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ভেটো দেওয়া ওয়াশিংটন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েলের বিচার ঠেকাতে পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তোলেন, অনেক রাজ্য ও সংস্থাকে গণহত্যা চালাতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি তারা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
এমন অবস্থায় যদি যুক্তরাষ্ট্র আগামীকালই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বন্ধ করে দেয় তাহলে কী ঘটবে? এ নিয়ে বিশেষ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।
বিষয়টি নিয়ে চারজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আলজাজিরা। তারা হলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজে আকতার, ইসরায়েলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওরি গোল্ডবার্গ, রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট অ্যান্ড সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের সিনিয়র ফেলো এইচএ হ্যালেয়ার এবং ইসরায়েলি সরকারের সাবেক একজন উপদেষ্টা দানিয়েল লেভি।
আন্তর্জাতিক পরিসরে কী ঘটবে?
ওরি গোল্ডবার্গ, ‘আমি মনে করি ইসরায়েলকে সমর্থন করা অনেক পশ্চিমা দেশ পৃথকভাবে আশাহত হয়েছে এবং তারা এখন ইসরায়েলের পতন চাইছে। যুদ্ধ-পরবর্তীতে জার্মানির সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেও তারা এখন দেশটির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট দূর হবে না।
তিনি বলেন, আমার ধারণা (যদি আগামীকালই ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন বন্ধ করে দেয়) তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য দেশও ঠিক একই কাজ করবে। তবে এক্ষেত্রে কেউ প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামবে না।
আঞ্চলিকভাবে কী ঘটবে? ইসরায়েল কি হামলার শিকার হবে?
এইচএ হ্যালেয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রকে যদি হঠাৎ করে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটি হলে এই সংকট দূর করতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।’
‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এ অঞ্চলে ইসরায়েলকে একীভূত রাখতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের গুরুত্ব দেয় তাহলেও সে এখানে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পাবে। যেমনটি আমরা দেখে আসছি ফিলিস্তিনি, লেবানিজ এবং সিরিয়ানদের প্রতি।
ইসরায়েলে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে বলে এমন ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। আবার অনেকেই যুক্তি দেখাবেন যে, এটি এক দশকেও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
হ্যালেয়ার বলেন, এ মুহূর্তে সিরিয়া শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ইসরায়েলের হামলা করবে না, বিষয়টি এমন নয়। বরং তাদের আর যুদ্ধ করার আগ্রহ নেই। তারা ভালো করে জানে, ইসরায়েল হামলা চালালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
সামরিক বাহিনীর মধ্যে কী ঘটবে?
হামজে আকতার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আগামীকালের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন উঠিয়ে নেয় তাহলে গাজা যুদ্ধে বড়জোড় এক বছর টিকতে পারবে ইসরায়েল। তবে এর মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কারণ গাজায় যে পরিমাণ অস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে তার পরিমাণ কমে যাবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারালে ইসরায়েল বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটেরও নিয়ন্ত্রণ হারাবে। কারণ এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইসরায়েল তাদের অঞ্চল সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া আয়রন ডোম এবং অ্যারো সিস্টেমের মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ওপরও নিয়ন্ত্রণ হারাবে। কারণে এর পেছনে অর্থের বড় জোগানদাতা হলো যুক্তরাষ্ট্র। এত করে ইসরায়েল আরও হামলা মুখে পড়বে।
মন্তব্য করুন