এমরান সালেহ প্রিন্স
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গত ১৭ অক্টোবর ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এদিন স্বাক্ষরিত হয়েছে জুলাই সনদ। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একে একে এ সনদে স্বাক্ষর করেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যেহেতু একটি সনদ প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাই এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। জুলাই সনদ কেবল একটি দলীয় উদ্যোগ নয়; এটি জাতীয় ঐক্যের এক প্রতিফলন, যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসকে পুনঃস্থাপন করারও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তবে সেদিন আমরা একটি উদ্বেগজনক বিষয়ও লক্ষ করেছি। কিছু পক্ষের কার্যক্রমে দেখা গেছে, তারা জুলাই যোদ্ধাদের উসকানি দিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। মূলত তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চেয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইভেন্টগুলোকে পণ্ড করার চেষ্টা করেছে। এমন কর্মকাণ্ড একেবারে নিন্দনীয় এবং গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নিরাপদ রাখা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নয়; বরং নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক এবং সব সচেতন নাগরিকের জন্যও একটি দায়িত্ব। এ কারণে আমরা দৃঢ়ভাবে বলি, জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়েই আমরা জুলাই সনদকে বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ।

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। তবে এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। বাস্তবিক অর্থে এটি সনদকে নিয়ে নয়, বরং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতানৈক্য। আমরা এ দায়িত্ব সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সরকার যেভাবে যথোপযুক্ত মনে করবে, সেভাবেই এটি কার্যকর হবে। এটি সরকারের দায়িত্ব এবং আমরা আশা করি তারা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। বাস্তবায়নের ধারা স্বচ্ছ এবং সমন্বিত হলে, তা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনবে।

এনসিপি এখনো সনদে স্বাক্ষর করেনি। তবে আলোচনায় তারা অংশ নিয়েছে। শেষ মুহূর্তে কিছুটা শিশুসুলভ মনোভাবও লক্ষ করা গেছে, যা জাতীয় স্বার্থের জন্য উপযুক্ত নয়। আমরা আশা করি, তারা এ মনোভাব পরিত্যাগ করে পরিপক্বতার পরিচয় দেখাবে। হঠকারী রাজনীতির পরিবর্তে ইতিবাচক ও দায়বদ্ধ রাজনীতিতে তাদের আসা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু দলীয় দায়িত্ব নয়, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করারও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সব দলের অংশগ্রহণ এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি।

নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। এটি কি বিএনপি ক্ষমতায় আসার আশঙ্কার কারণে? বিষয়টি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। সরকারই এরই মধ্যে বা আগামী দিনে বিষয়টি খোলাসা করবে। এটি স্পষ্ট করে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং পারস্পরিক বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা এবং সমন্বয় সৃষ্টি না হলে জাতীয় ঐক্যের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এটি শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জাতীয় ঐক্য এককভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল রাখার একটি মূল উপাদান।

অনেকে বিএনপির ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছে না। এটি তাদের সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন। তবে আমাদের বিশ্বাস, যারা এ সীমাবদ্ধতার শিকার, তারাও দেশের প্রয়োজনের সময় সরকারে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম। দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, তবে জাতীয় স্বার্থ এবং জনগণের কল্যাণ সর্বদা অগ্রাধিকার পাবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রয়োজন দায়িত্বশীল, পরিপক্ব এবং ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার।

জুলাই সনদ কেবল একটি দলীয় উদ্যোগ নয়; এটি বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের এক প্রতীক। এর সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলতা, পারস্পরিক সমন্বয় এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতার ওপর। আজকের দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যতই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বা মতানৈক্য থাকুক না কেন, দেশকে একত্রিত করা সম্ভব, যদি আমরা বিশ্বাস করি ঐক্য, পরিপক্বতা এবং দায়বদ্ধ রাজনীতিতে। এই দিনে আমরা যে পথে এগোচ্ছি, তা দেশের জন্য ইতিবাচক ও স্থায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এ ছাড়া এই সনদ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সমঝোতা নয়; এটি নাগরিকদের, সামাজিক সংগঠনগুলো এবং সমগ্র দেশের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা বাড়ানোর একটি সুযোগ। দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ, সমন্বিত এবং দায়িত্বশীলভাবে পরিচালিত হয়, তবে আগামী প্রজন্মের জন্যও এটি একটি শক্তিশালী এবং স্থায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাহজালাল বিমানবন্দরে পণ্য রাখার নতুন স্থান নির্ধারণ

ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ মিলছে ৪২ দেশের নাগরিকদের

বাগেরহাটে কলেজ ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলা

ঘাস চিবিয়ে মাঠ ‘অনুভব’ করতেন রোনালদো!

মালয়েশিয়ায় কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

৭ লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের তাফতান আগ্নেয়গিরি!

শিক্ষক নিয়োগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি কবে, জানাল এনটিআরসিএ

গণভোট নিয়ে গড়িমসি করছে সরকার : জামায়াত

চেতনা চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতি বাংলাদেশে আর হবে না : শিবির সভাপতি

ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের হামলা, কোস্টগার্ডের গুলি

১০

গুগলে কম সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার ৫ কার্যকর কৌশল

১১

রোনালদোর ‘হাজার গোল’ ছোঁয়ার ভবিষ্যদ্বাণী এআই-এর!

১২

চট্টগ্রাম বন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি

১৩

অনুমতি ছাড়াই নারীর ছবি অনলাইনে পোস্ট, সাড়ে ৬ লাখ টাকা জরিমানা

১৪

যোগদান করছেন চট্টগ্রামের নতুন ডিসি সাইফুল ইসলাম

১৫

একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, বিদেশে কাজ ও মৃত্যুর পরও পাশাপাশি দাফন

১৬

বানার নদীর স্রোতে ভেসে গিয়ে দুই নারীর মৃত্যু

১৭

আ.লীগ নেতা হাসানাত আব্দুল্লাহর নামে মামলা

১৮

স্মার্টফোনে থাকা সব ছবি গোপনে দেখবে ফেসবুক, কীভাবে

১৯

নর্থ সাউথের সেই শিক্ষার্থীর দোষ স্বীকার

২০
X