অনলাইনে কারও ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ এখন অনেকের কাছে স্বাভাবিক কাজ মনে হলেও, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে নারীদের সম্মান ও গোপনীয়তা সুরক্ষায় কিছু দেশে রয়েছে কঠোর আইন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে এমনই এক ঘটনায় উদাহরণ সৃষ্টি করল আদালত।
এক নারীর অনুমতি ছাড়াই তার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় এক ব্যক্তিকে ২০ হাজার দিরহাম জরিমানা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকারও বেশি। আদালত বলেছে, এই কাজ শুধু গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, এটি ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার শামিল।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন অভিযুক্ত ব্যক্তি এক নারীর ছবি ও ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করেন। এতে ওই নারী মানহানির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন। বিষয়টি প্রথমে আবুধাবি ক্রিমিনাল কোর্টে বিচার হয় এবং সেখানে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি আপিল করলেও ফ্যামিলি, সিভিল ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্লেমস কোর্ট সেই রায় বহাল রাখে। শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি আর কোনো আপিল না করায় রায়টি চূড়ান্ত হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল সিভিল ট্রানজ্যাকশনস আইনের ২৮২ ধারায় বলা হয়েছে— কেউ যদি অন্যের ক্ষতি করে, সে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তা করুক, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। আদালত এই ধারাকে ভিত্তি করে ক্ষতিপূরণের রায় প্রদান করে।
আমিরাতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় আইন অত্যন্ত কঠোর। কারও অনুমতি ছাড়া তার ছবি, ভিডিও, ভয়েস নোট বা বার্তা শেয়ার করলেই তা সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল বা ব্লগ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা, কারাদণ্ড এবং বিদেশিদের ক্ষেত্রে দেশ থেকে বহিষ্কারেরও বিধান রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় শুধু একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। অনলাইনে কারও ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে; নতুবা তা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার ফলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো— ডিজিটাল যুগে ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি আইনি বাধ্যবাধকতা।
মন্তব্য করুন