

ঢাকার বস্তিগুলো এমনিতেই ঝুঁকির ওপর দাঁড়ানো। ছোট ঘরগুলোর ভেতর দাহ্য উপকরণ, টিন, কাঠ, প্লাস্টিক, ফোম মিলে তৈরি হয় আগুন ছড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ। সংকীর্ণ গলি, জটলা পাকানো বৈদ্যুতিক তার, বাতাসে শুকনো কাঠের গন্ধ; সব মিলিয়ে একটি স্পার্কই যথেষ্ট বড় বিপর্যয় ঘটাতে। কড়াইলেও হয়তো সেটাই ঘটেছে। অবশ্য আগুনের সূত্রপাত এখনো অজানা। ধারণা করা হয়, এ আগুনের সূচনা হয় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদেরও সংকটে পড়তে হয়েছে। সংকীর্ণ গলি আর পানি আনার লাইন স্থাপন করতেও লেগেছে বহুগুণ বেশি সময়। প্রতিটি সেই মিনিটই তখন কারও ঘর, কারও জীবন, কারও স্মৃতিকে আগুনের কাছে সমর্পণ করে দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতির প্রতিকার শুরু করতে হলে প্রথমত ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো চিহ্নিত করে প্রযুক্তিগতভাবে সংস্কার করা অপরিহার্য। বস্তি এলাকাকে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনলে তারের জট, অতিরিক্ত লোড আর শর্টসার্কিটের মতো বিপদ অনেকটাই কমবে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নিম্নমানের ও অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের বাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারি সংস্থা, সিটি করপোরেশন ও তদন্ত দলকে যৌথভাবে এই এলাকায় সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা, বিতরণ ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধী সিন্ডিকেটগুলোকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি বস্তি এলাকার সংকীর্ণ গলি পুনর্বিন্যাস করে জরুরি সড়ক তৈরি করাও অপরিহার্য; কারণ, ফায়ার সার্ভিস যদি আগুনের কাছে পৌঁছাতেই না পারে তবে আগুন নেভানো আর প্রতিরোধ দুটোই অর্থহীন হয়ে যায়। কমিউনিটিভিত্তিক ফায়ার সেফটি প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মহড়া বস্তিবাসীদের দক্ষ করে তুলতে পারে যাতে করে ছোট আগুনকে বড় হতে না দেওয়ার সক্ষমতা তাদের এলাকায় গড়ে ওঠে। কিন্তু এসবের বাইরে আরও বড় একটি বিষয় হচ্ছে পুনর্বাসন। আগুন নিভলেও মানুষের জীবনে আগুনের ক্ষত বহুদিন জ্বলতে থাকে। তাই প্রতিবার আগুন লাগার পর তাদের আবার সেই একই জায়গায় ফিরে যেতে দেওয়া মানে নতুন একটি আগুনের অপেক্ষা করা। দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পিত বহুতল আবাসনই একমাত্র স্থায়ী সমাধান, যেখানে থাকবে নিরাপদ বিদ্যুৎ, নিয়মিত গ্যাস, অগ্নিনিরোধী নির্মাণসামগ্রী ও পানির উৎস। কড়াইল বস্তির আগুন শুধু কয়েকশ ঘর পোড়ায়নি, এটি নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা, নিরাপত্তাহীনতার নগ্ন সত্য এবং আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকেও সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আগুনের উৎস রহস্য হতে পারে, কিন্তু শিক্ষাটি কখনোই রহস্য হয়ে থাকা উচিত নয়। শহরকে নিরাপদ করার জন্য আমাদের সবারই উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে অসাবধানতায় আগুন না লাগে, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা।
ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন, শিক্ষার্থী
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট
মন্তব্য করুন