

শহীদ সাবের লেখক ও সাংবাদিক। প্রকৃত নাম একেএম শহীদুল্লাহ। তিনি ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের ঈদগাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সালামতউল্লাহ এবং মা শফিকা খাতুন।
শহীদ সাবেরের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ঈদগাঁ প্রাইমারি স্কুলে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের পর তিনি পিতার কর্মস্থল কলকাতায় হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং ওই স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। আইএ ক্লাসে ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। কলকাতার পার্ক সার্কাসের বালুহক্কাক লেনে ‘ছোটদের আসর’ নামে একটি সংগঠন ছিল। শহীদ সাবের ছিলেন এ সংগঠনের লাইব্রেরিয়ান। এ সময় তিনি ছন্দশিখা নামের একটি দেয়াল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি চট্টগ্রামে মুকুল ফৌজ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কলেজে অধ্যয়নকালে শহীদ সাবের প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকার কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার শুরু করলে ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৫১ সালে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেল থেকে আইএ পাস করেন। চার বছর অন্তরীণ থাকার পর ১৯৫৪ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে কিছুকাল সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির পর তিনি দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময় তিনি ফেডারেল ইনফরমেশন সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু রাজনৈতিক বন্দি থাকার কারণে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
১৯৫৮ সালের শেষের দিকে শহীদ সাবেরের মানসিক বৈকল্য ঘটে। তার সেই মানসিক বিপর্যয়কালে সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষে রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই উদ্যোগ নিয়ে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও চিকিৎসার ধারাবাহিকতার অভাবে সেই সুস্থতা বজায় থাকেনি। ক্রমেই আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বংশালের সংবাদ অফিসই হয়ে উঠেছিল সাবেরের একমাত্র আশ্রয়স্থল। সংবাদ অফিসে তিনি রাতে ঘুমাতেন।
তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে—কারাগারে বসে লেখা আরেক দুনিয়া থেকে (কলকাতার নতুন সাহিত্য পত্রিকায় চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় প্রকাশিত), গল্প সংকলন—এক টুকরো মেঘ (১৯৫৫), শিশু সাহিত্য ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান (১৯৫৫), অনূদিত গ্রন্থ ইসকাপনের বিবি, পাগলের ডায়রি, কালো মেয়ের স্বপ্ন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৭২, ছোটগল্প), চট্টগ্রামস্থ কক্সবাজার সমিতির কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর-২০০৩), কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কক্সবাজার পদকসহ (মরণোত্তর-২০০৪) বেশ কিছু জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। শহীদ সাবের দৈনিক সংবাদ অফিস ভবনেই থাকতেন। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ সকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দিলে সেই আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়।
মন্তব্য করুন