জলবায়ুবিষয়ক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়েছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) সমর্থিত বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি (জিসিসিএম) তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে। শুক্রবার দুপুরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮)-এর ফাঁকে একটি উচ্চস্তরের প্যানেল অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস এবং আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপের কাছ থেকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। রোববার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ অর্জনে সারা দেশের মানুষের মতো আমারও গর্বিত এবং কালবেলা পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই।
দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
২০১০ সাল থেকে জার্মানওয়াচ বিশ্বের সবকটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি নিয়ে ওই সূচকভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতি, জীবনের ক্ষতি ও দুর্যোগের আঘাতের মোট সংখ্যাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা এগিয়েছে। যে বছর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, তার আগের ২০ বছরে ওই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের আঘাত ও প্রভাব আমলে নেওয়া হয়। প্রথম তিন বছর বাংলাদেশের নাম শীর্ষে থাকার অন্যতম কারণ ছিল ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা আমলে নেওয়া হয়। কিন্তু ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও ফণির নাম এসেছে।
আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ বাংলাদেশে দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এজন্য আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রস্তুতি ও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চলাফেরায় যে প্রভাব পড়ছে, তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে—আমাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিতে মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করা। জলবায়ু-অভিবাসীদের অভিঘাত ও ক্ষতির প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার জন্য জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া। অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসেবে দেখার জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুত হওয়া। জলবায়ু-অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষামান পর্যালোচনা করা। সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে এটির জন্য একটি গঠনমূলক অবস্থান তৈরিতে মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে উন্নত গবেষণা ডাটা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা।
আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এসব পরামর্শ বাস্তবায়ন করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা সহজ হবে।