কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতি-অর্থনীতির জঞ্জাল দূর হোক

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সৌজন্য ছবি
পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সৌজন্য ছবি

পুরোনো জঞ্জাল ঝেড়ে সবার মঙ্গল কামনা দিয়েই নতুন বছর শুরু হয়। সেখানে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে বছরজুড়ে ভালো থাকার প্রত্যাশাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তবে যদি সমষ্টিগত চিন্তার কথা বলা হয়, তাহলে বলব দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির স্থিতিশীলতার বিষয়টিই সবার সামনে আসবে। এক্ষেত্রে নতুন বছরের প্রথম সপ্তায় যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে, তা ভালোভাবে সেরে ফেলাটা জরুরি। কারণ, এটি ব্যক্তি বিশেষ কিংবা সমষ্টিগত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই স্বার্থসংশ্লিষ্ট, এ কারণে যে, টেকসই সরকার এবং স্থিতিশীল রাজনীতির নিশ্চয়তা ছাড়া সামগ্রিক অর্থনীতিও ভালো আচরণ করবে না। ব্যক্তিও ভালো থাকবে না। ফলে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিদায়ী বছরের সৃষ্ট নানামুখী ঝুট-জঞ্জাল নতুন বছরকেও গ্রাস করতে পারে। এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা থাকবে সরকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষ হাতে সুচারুভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের ভাবনা থেকে চিন্তা করা হলে দেশীয় বাস্তবতা বলছে, সবার আগে দরকার সাধারণের জীবনে বয়ে চলা কষ্টগুলোকে আরও প্রশমিত করা। সরকারও নিশ্চয় চাইবে নতুন বছরে সাধারণের জীবনে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারলেই ক্রেতা-ভোক্তা তথা সাধারণ মানুষের বড় প্রাপ্তিটি হয়ে যায়। তাই সবার নজরও এখন মূল্যস্ফীতির দিকেই। এক্ষেত্রে বাজার সিন্ডিকেট যাকে আমি বলি দুষ্টচক্র, তাকে যে কোনো মূল্যে দমন করতেই হবে। নতুবা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা নিষ্ফল হয়ে পড়বে।

তবে আমি মনে করি, প্রত্যাশার জায়গাটি নির্ভর করে বর্তমান প্রাপ্তির ওপর। তাহলে আমরা কতটা অর্জন করতে পারব তার একটা আন্দাজ করা যায়। সেখানে একটু পেছনে তাকালে বিষয়টি উপলব্ধি করতে সবার জন্য সহজ হয়। যদি একটু ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিরে তাকাই, তাহলে দেখব আমরা খুব ভালোই করছিলাম। শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক বিভিন্ন সূচকেও অনেক অগ্রগতি মিলেছে। এমনকি অনেকগুলোয় আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সবার ওপরে ছিলাম। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও সহায়ক ভূমিকায় ছিল; কিন্তু এরপরই সেই ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন। প্রথমে কভিডের ধাক্কা এবং তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বই টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে-আমরাও পড়েছি। সেই সবের বাস্তবতায় আমরাও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে বিদায়ী বছরটি অতিক্রম করলাম। যদিও তার অনেকাংশেই আমরা উত্তরণের চেষ্টা করেছি। সেখানে কোথাও সফল হয়েছি। কোথাও আবার ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। অর্থাৎ এখানে নতুন বছরে আশার জায়গাটি হলো চ্যালেঞ্জগুলো আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন আমাদের শুধু তা মোকাবিলায় আরও বাস্তবমুখী ও কার্যকরী উদ্যোগে যেতে হবে।

প্রত্যাশা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিবেচনায় নানাদিক আলোচনার সুযোগ থাকে। তবে আমি মোটাদাগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে বিশেষ করে আমি ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে সুশাসনের আওতায় আনার ওপর জোর দেব। কারণ, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। টাকা পাচার হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। হুন্ডি প্রবণতা বাড়ছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করতে না পারলে চেষ্টা করেও অর্থনীতির স্বাভাবিক অগ্রগতি ধরে রাখা যাবে না।

অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন রুখতে হবে। নাজুক রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়নে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি আয় বাড়ানো ছাড়াও আরও যেসব উপায় ব্যবহার করা যায়, চলতি বছর সেগুলোয় মনোযোগ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক কারণে এমনিতেই প্রবৃদ্ধি কমছে। অর্থনৈতিক অন্যান্য সূচকও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এগুলোকে অগ্রগতির ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলেও পণ্য ও সেবার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, আমদানি, মজুত ও সরবরাহ বাড়ানোর দিকে নতুন বছরে অধিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও সাবেক চেয়ারম্যান, পিকেএসএফ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

ক্ষমা চাইলেন স্বাধীন খসরু 

স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আমিনুল হক

ঢাকায় উদযাপিত হলো রাশিয়ান পতাকা দিবস

একাদশে ভর্তিতে কোনো শিক্ষার্থী পায়নি ৩৭৮ কলেজ

৫০ হাজারে শ্লীলতাহানির রফাদফা করলেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক

১০

কে বেশি টাকা দেয়, ফেসবুক নাকি ইউটিউব

১১

অর্ধ বিলিয়ন জরিমানা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প

১২

মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে থানায় জিডি মহানগর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের

১৩

চাকরির নামে প্রতারণা, আমেরিকা প্রবাসী আটক 

১৪

শর্ত না মানলে ধ্বংস হবে গাজা সিটি : ইসরায়েল

১৫

নতুন করিডোর প্রকল্প শুরু করতে চায় চীন-পাকিস্তান

১৬

থানা হাজতে যুবকের মৃত্যু, এএসআইসহ ৩ পুলিশ প্রত্যাহার

১৭

চবিতে নিলস-সিইউ পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতা শনিবার

১৮

জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন হয়নি, কারণ জানাল পুলিশ

১৯

বাদশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি মেয়র শাহাদাতের 

২০
X