জয়ন্তী রায়
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০২ এএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নারী মুক্তির সংগ্রামে শ্রীমতী সাহা

শ্রীমতী সাহা।
শ্রীমতী সাহা।

আজ ৮ ফেব্রুয়ারি। শ্রীমতী সাহার জন্মদিন। তিনি ১৯৫০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। নারী মুক্তির সংগ্রামে যে কজন নারী আমাদের শ্রদ্ধার পাত্রী, শ্রীমতী সাহা তাদের একজন। পিতা বিমলেন্দু দাস (সাধু বাবু) ছিলেন সিলেটের নামকরা ব্যবসায়ী। শ্রীমতী সাহা ১৭ বছর বয়সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার পুত্র রবি সাহার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী ও শ্বশুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন এবং শাহাদাতবরণ করেন। তখন শ্রীমতী সাহার কোলে ছিল তিন বছরের শিশু রাজীব। এ সময় কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের (বিডি) যাবতীয় কর্মভার গ্রহণ করেন রণদা প্রসাদ সাহার ছোট মেয়ে জয়াপতি। স্বামী হারানোর শোক ও কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করে ট্রাস্টের কাজে আত্মনিয়োগ করেন শ্রীমতী সাহা। শিশুপুত্র রাজীব ও শাশুড়ির সেবাযত্নের পাশাপাশি পড়াশোনায় মন দেন এবং একসময় বিএ পাস করেন।

শ্রীমতী সাহা ১৯৮৩ সালে শ্রমজীবী নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের অনন্য প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফেটর পরিচালনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। প্রথমে ৩০-৩৫ জন অসহায় শ্রমজীবী নারীকে নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ২৬ হাজার শ্রমজীবী নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। ১৯৮৫ সালে তিনি কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের অন্যতম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যুর পর তিনি ভেঙে পড়েননি। রণদা প্রসাদের ছোট মেয়ে জয়াপতির সঙ্গে একযোগে কাজ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে স্বামী-শ্বশুরের রেখে যাওয়া বিশাল কুমুদিনী ট্রাস্টের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ট্রাস্টের সব সেবামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নিরলস পরিশ্রম করেন। ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ধনী পরিবারে বিয়ে হয়েছে—এ ভাবনা তাকে কখনো আচ্ছন্ন করতে পারেনি। ভারতেশ্বরী হোমসের ছোট মেয়েদের গায়ে চুলকানি হলে তিনি নিজ হাতে ওদের গায়ে নিমপাতা বাটা লাগিয়ে দিতেন এবং স্নান করাতেন। ছোট মেয়েদের তিনি নিজ সন্তানের মতোই আদর করতেন। হোমসের অসুস্থ মেয়েরা তার কাছে মায়ের আদর পেত। ছাত্রীদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অসুস্থ শাশুড়ির সেবা করেছেন দীর্ঘ ১৯ বছর। নিজ হাতে শাশুড়িকে স্নান করিয়েছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন, খাইয়ে দিয়েছেন।

রাতে রাজীবকে নিয়ে শাশুড়ির কাছে ঘুমিয়েছেন। আমাদের সমাজে বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক তিক্ত হলেও শ্রীমতী সাহার শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মধুর। শ্রীমতী বাপের বাড়ি বেড়াতে গেলে তার শাশুড়ি আরও অসুস্থ হয়ে পড়তেন। পরে সবার অনুরোধে ফিরে আসতেন মির্জাপুরে শ্বশুরের ভিটায়। শ্রীমতীর বাবা-মাও বড় মনের মানুষ ছিলেন। মেয়ের শাশুড়ির প্রতি গভীর মনোযোগকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন তারা। কুমুদিনী হাসপাতালে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা যেসব সেবা চালু করেছিলেন, সেগুলোকে আরও কার্যকর করতে জয়াপতির সঙ্গে কাজ করেছেন। কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ, কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজকে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, নারীর মুক্তি ঘটলে সমাজের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হবে; নারীকে ঘরে আটকে রেখে উন্নতি সম্ভব নয়; নারী আর্থিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই মুক্তি সম্ভব—এ বিশ্বাস থেকেই তিনি নিরলস কাজ করছেন। রাষ্ট্র এ মহীয়সী নারীকে ২০০৫ সালে রোকেয়া পদকে ভূষিত করে।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম বন্দরে সভা-সমাবেশে ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞা

নীরবে শরীরে ছড়াচ্ছে ক্যানসার, সকালে এই একটি লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হোন

এনআইডি পেয়ে সেই জসিম বললেন, ‘অবিস্মরণীয় মুহূর্ত’

শাহরুখ খানকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিলেন পরিচালক

স্বামীসহ ২ ডজন মামলার আসামি শিপরা গ্রেপ্তার

জানা গেল শহিদুল আলমের সবশেষ অবস্থা

ফিলিপাইনে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

জুমার দিন যে সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ মনের চাহিদা পূরণ করেন

শেরপুরে স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন, ক্ষোভে ফুঁসছেন তরুণরা 

অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নিবন্ধন পেলেন ৭ উদ্যোক্তা

১০

ভিক্ষুকের ঘরে ২ বস্তা টাকা, গুনতে লাগল ৫ ঘণ্টা 

১১

১০ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে 

১৩

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৪

গাজা চুক্তিকে ইরান হামলার সঙ্গে যুক্ত করলেন ট্রাম্প

১৫

১০ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

নোয়াখালী বিভাগ চেয়ে ইতালিতে প্রবাসীদের স্মারকলিপি

১৭

কাবুলে বিস্ফোরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যা বললেন জবিউল্লাহ মুজাহিদ

১৮

‘ওলামা-মাশায়েখদের ত্যাগ-কোরবানি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’

১৯

যুদ্ধবিরতিতে গাজার ঘরে ঘরে আনন্দ, রাস্তায় মিছিল

২০
X