ড. কবিরুল বাশার
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৬ এএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস

ছোট কামড়, বড় হুমকি

ছোট কামড়, বড় হুমকি

আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস । প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে এই দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো—‘স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সমতা এবং মানবাধিকার’। বিশ্বের মানুষকে ম্যালেরিয়ার বাহক ও ম্যালেরিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতন করা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

ম্যালেরিয়া সমস্যাকে সমাধান করতে পারবে এমন কোনো একক হাতিয়ার বর্তমানে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই এ বিষয়ে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের আহ্বান জানাচ্ছে, যা ম্যালেরিয়া সমস্যা সমাধানে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এ বছরের প্রতিপাদ্যে ম্যালেরিয়া বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস ২০০৭ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের (WHO-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা) ৬০তম অধিবেশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরবর্তী বছর থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস প্রতিষ্ঠার আগে, আফ্রিকা ম্যালেরিয়া দিবস ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতো। আফ্রিকা ম্যালেরিয়া দিবস ২০০১ সালে শুরু হয়েছিল, ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে ৪৪টি ম্যালেরিয়া-এনডেমিক দেশ দ্বারা ঐতিহাসিক আবুজা ঘোষণার স্বাক্ষরের এক বছর পর।

দিবসটি ‘ম্যালেরিয়া সম্পর্কে শিক্ষা ও বোঝাপড়া’ প্রদান এবং স্থানীয় এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমসহ জাতীয় ম্যালেরিয়া-নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলোর বছরব্যাপী সঠিক বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ম্যালেরিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য রোগ, যা সারা বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবিকার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে চলেছে। ২০২২ সালে ৮৫টি দেশে ম্যালেরিয়ায় আনুমানিক ২৪৯ মিলিয়ন নতুন রোগী এবং আনুমানিক ৬ লাখ ৮ হাজার ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭৭টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে পার্বত্য তিনটি জেলা—বান্দরবান, রাঙামাটি এবং কক্সবাজার। ২০০০ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া হয় ২০০৮ সালে। এ বছর ৮৪ হাজার ৬৯০ জন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল এবং ১৫৪ জন মারা গিয়েছিল।

প্রোটোজোয়া পর্বের ক্ষুদ্র প্রাণী ‘প্লাসমোডিয়াম’ ম্যালেরিয়ার পরজীবী, যেটি অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশ অ্যানোফিলিস মশার চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে, তার মধ্যে অ্যানোফিলিস ডাইরাস অন্যতম। এপিডেমিক বাহক হিসেবে আরও তিনটি অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়।

পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ছিল, কারণ সে সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক-ডিডিটির ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ম্যালেরিয়া বেড়ে যায় তার মূল কারণ ছিল ১৯৮১ সালে ডিডিটি নিষিদ্ধ করা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের তহবিলের অভাব।

ম্যালেরিয়ায় প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হওয়া এবং মারা যাওয়ার কারণে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকার ম্যালেরিয়াকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করে এবং এটি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির অধীনে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম ও এর সহযোগী সংস্থা ব্র্যাকের কার্যক্রমের কারণে ২০০৮ সালের পর দেশে ম্যালেরিয়া কমতে শুরু করেছে। গত বছর (২০২৩ সালে) দেশে প্রায় ১৫ হাজার ৫৬৫ জন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ছয়জন মারা গেছে।

ম্যালেরিয়া যেহেতু মশার মাধ্যমে ছড়ায় তাই এটির বিরুদ্ধে অগ্রগতির গতি ত্বরান্বিত করার জন্য ম্যালেরিয়া বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক যুগোপযোগী পদ্ধতি, ডায়াগনস্টিকস, ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসার জন্য আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর একযোগে কাজ করা জরুরি। ম্যালেরিয়া বাহকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা এবং গবেষণার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঝারি এবং উচ্চ ম্যালেরিয়া সংক্রমণ এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে ম্যালেরিয়া টিকার ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। ব্যাপকভাবে এটির প্রয়োগ প্রতি বছর হাজার হাজার জীবন বাঁচাতে পারে বলে তারা বলছে।

বাংলাদেশ সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূলের ঘোষণাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং গবেষকদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া নির্মূলে মশারি বিতরণের পাশাপাশি অন্যান্য নতুন কৌশল, বিশেষ করে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিনামূল্যে রেপেলেন্ট ক্রিম বিতরণ করা যায় কি না, সেই বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

লেখক: কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইল: [email protected]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১০

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১১

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১২

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৩

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৪

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৫

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৬

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

১৭

প্রথমবারের মতো ইউনেস্কোর সভাপতি বাংলাদেশ

১৮

ভারতীয়দের জন্য সংকুচিত হচ্ছে মার্কিন দরজা

১৯

‘সোলজার’র প্রথম ঝলকে কী বার্তা দিলেন শাকিব খান?

২০
X