কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ এএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

কারিগরি শিক্ষার ভগ্নদশা

কারিগরি শিক্ষার ভগ্নদশা

‘জোড়াতালির কারিগরি শিক্ষা’ শীর্ষক শিরোনামে শনিবার কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশে কারিগরি শিক্ষার যে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত হতাশার। যদিও কারিগরি শিক্ষা খাতের এই ভগ্নদশা নতুন কোনো খবর নয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের প্রায় সব পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) নানা সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে প্রধান সংকট হচ্ছে শিক্ষক সংকট। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক এনে ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে ক্লাস করানো হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অস্বাভাবিক। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হওয়ার কথা যেখানে ১ : ১২, সেখানে অনুপাত ১ : ৫০। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সেটি ১ : ১০০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পর্যাপ্ত ল্যাব সংকট, পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে শিক্ষাদানসহ অবকাঠামো সংকটের কারণে শ্রেণিকক্ষ সংকট প্রকট। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থাও খুবই অপ্রতুল। দেশে তিনটি স্তরে কারিগরি শিক্ষার পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৬৮৪টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৩০। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৯১টি। সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে এখনো অর্ধেকের বেশি পদ ফাঁকা রয়েছে। শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মচারী সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চিত্রই যদি তুলে ধরা হয়, সেখানে ১৮২ শিক্ষক পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৩৪ জন। একই অবস্থা কর্মচারী পদের ক্ষেত্রেও। ১৫৯টি পদের মধ্যে ৯৫টিই ফাঁকা। সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক ও জনবল দিয়ে কোনো রকম ক্লাস ও অন্যান্য কাজ চালানো হচ্ছে। ল্যাবের যন্ত্রপাতিও অনেক পুরোনো। আবার ল্যাব পরিচালনা করার মতো জনবল সংকটও প্রকট। অবকাঠামো ও শিক্ষক-কর্মচারীর অপ্রতুলতার কারণে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। কারিগরির মূল পাঠ ব্যবহারিক হলেও একজন শিক্ষকের অনুপাতে ১০৩ জন শিক্ষার্থী হলে সেই শিক্ষার মান কোথায় দাঁড়ায়? এ ছাড়া রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। একই চিত্র কমবেশি সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এ খাতটির উন্নতির লক্ষ্যে যে পরিমাণ গুরুত্ব বাড়ানো দরকার, বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। অথচ বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সে সময় কারিগরি শিক্ষাকে ‘অগ্রাধিকারের অগ্রাধিকার’ বলে ঘোষণা করেছিল। সেই অনুযায়ী খাতটির উন্নতির লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তবে যতটুকু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও যে অবহেলা-উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা পৌঁছেছে চরমে, তার প্রমাণ খাতটির বর্তমান অবস্থা। বর্তমান সরকার একটানা দেড় দশকেরও অধিক সময় ধরে দেশ পরিচালনা করছে, সেই হিসেবে কারিগরি শিক্ষা খাতকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তোলার পর্যাপ্ত সুযোগ তাদের ছিল। অত্যন্ত বেদনার বিষয় যে, লক্ষ্য অর্জন ও বাস্তবায়ন তো হয়নি; বরং খাতটি পড়েছে চরম সংকটের মুখে। এই অনিশ্চিত যাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হবেন, এটাই বলাবাহুল্য।

আমরা মনে করি, এ শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার আরও আন্তরিক হতে হবে এবং সব ধরনের অবহেলা ও উদাসীনতা দূর করতে হবে। মানসম্মত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত দক্ষ ও উপযুক্ত শিক্ষক গড়ে তোলার বিকল্প নেই। অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যমান যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ইরান

নতুন মাত্রায় ইসরায়েলে ইরানের হামলা

ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

ইরানে ডজনের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের

সময়ের ভুল মূল্যায়নেই কি হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের জয়?

ইরানের পক্ষে লন্ডনে বিশাল বিক্ষোভ

‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে : হান্নান মাসুদ

লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে হামলার হুমকি

নির্বাচনের দিকে পুরোদমে হাঁটছে ইসি, নিচ্ছে যেসব প্রস্তুতি

চাঁদাবাজির সময় তাঁতি দল নেতাকে গণপিটুনি

১০

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

১১

ইরানের ভাঙন চেয়েছিল ইসরায়েল, উল্টো জুড়ে যাচ্ছে

১২

এবার আল আকসায় হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের?

১৩

খালেদা জিয়া সর্বপ্রথম সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন : আসাদুজ্জামান রিপন

১৪

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের বিবৃতি

১৫

ঢাকা কলেজ এইচএসসি- ’৯৬ ব্যাচের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

১৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

১৭

ম্যাথুজের মতো সম্মানের সঙ্গে বিদায় চান শান্ত

১৮

৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ : এস এম জিলানী

১৯

পেসাররা আরেকটু ভালো করতে পারত : শান্ত

২০
X