রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৬ ভাদ্র ১৪৩২
মীর শাহরুখ ইসলাম
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৮ এএম
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে আইসিটি ভূমিকা রাখতে পারে

জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে আইসিটি ভূমিকা রাখতে পারে

বিশ্ব অর্থনীতির পরিমণ্ডলে সংগ্রামী একটি জাতি থেকে এক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিতে বাংলাদেশের যে রূপান্তর ঘটেছে, ঘটনাটি ম্যাজিকের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হতো আমাদের, সেখান থেকে বিশ্ববাজারে এক উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠার পথে দেশটির যাত্রা তার সাহস এবং সংকল্পেরই প্রমাণ দেয়। এখন যে সময়ে আমরা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবিলা করা শিখতে হবে।

এই ভিশন বাস্তবায়নের মর্মে যে শিল্প খাতটি অবস্থান করে, সেটি হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত বা আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি; যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে প্রধান একটি পরিচালিকা শক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। ১.৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিবাজারসহ আইটি সেক্টরে ৩.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজার বিদ্যমান। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের বার্ষিক বেতন দিয়ে প্রায় তিন লাখ ব্যক্তিকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর। আমাদের অর্থনীতির একটি জরুরি ভিত্তি হয়ে উঠেছে শিল্প খাতটি। আমাদের জাতীয় জিডিপিতে এর প্রত্যক্ষ অবদান প্রায় ১.২৫ শতাংশ, পরোক্ষভাবে যা প্রায় ১৩ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানগুলো আমি দিচ্ছি সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে। রপ্তানি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কৌশলগত একটি খাত হিসেবে আইসিটি শিল্পের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। উচ্চ সিএজিআরসহ ক্রমবর্ধমান একটি খাত আইসিটি, প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি লোক নিয়োগ করে চলেছে।

আইসিটি শিল্পের সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সফলতার সঙ্গে উতরে যেতে সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। ২০২৪ সালের জুন থেকে আইটি এবং আইটি-এনাবেলড সার্ভিসের জন্য ছাড়কৃত করপোরেট করের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এই প্রণোদনা বাদে ছোট এবং মাঝারি আকারের আইসিটি কোম্পানিগুলো যেগুলো কি না এই শিল্প খাতের মেরুদণ্ড তৈরি করে, তাদের ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। হাজার হাজার আইসিটিনির্ভর পেশাজীবীর জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়বে, একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে আমাদের অগ্রযাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হবে।

আইসিটি শিল্প, ছাড়কৃত করের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে তা বাংলাদেশি শিল্প খাতের ইকোসিস্টেমে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শিল্পটি প্রতিযোগিতামূলকভাবে পিছিয়ে পড়বে, ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। এমনকি আইসিটি পেশাজীবীদের বেতন থেকে প্রাপ্য আয়করের অংশটিও কমে যাবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির স্বাস্থ্যকে আইসিটির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে পারি, বৈশ্বিক আইটির একটি প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশের যাত্রায় তা বিঘ্ন ঘটাবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প তৈরি হয়েছে এআই, আইওটি, ব্লকচেইন, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি ক্ষেত্রের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এগুলো, এসব প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার হয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যদি প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের সেই উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি না হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন কখনোই অর্জিত হবে না।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পরবর্তী সময়ের জন্য রপ্তানি প্রণোদনার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো প্রস্তাবিত হয়েছে, তা আমাদের আইসিটি রপ্তানির বৃদ্ধিকে আরও বাধাগ্রস্ত করতে পারে। উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশিত রপ্তানির ওপর নামমাত্র ২ শতাংশ প্রণোদনা দিলে আইটি রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বৈশ্বিক ক্যানভাসে আইসিটি পরিষেবার একটি গন্তব্য হয়ে ওঠা শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে আমাদের।

এই চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক পরিষদ এবং জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের একটি সাহসী এবং কৌশলগত অবস্থান নেওয়া দরকার বলে মনে করি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনের চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে আইসিটি শিল্প যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। এই শিল্পক্ষেত্রের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের। ২০২৪ সালের পরও আইসিটি সেক্টরের জন্য কর প্রণোদনা যেন চলতে থাকে, রপ্তানি প্রণোদনার নীতিগুলো যেন বৃহত্তর সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং এই শিল্প খাতে যত উদ্যোগ ও এসএমই গড়ে উঠেছে, সেগুলো বেড়ে ওঠার জন্য যেন একটি অনুকূল পরিবেশ পায়।

সবশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ আজ এক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে আছে এবং আইসিটি শিল্প নিঃসন্দেহে এর ভবিষ্যৎ তৈরিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তবে এই রূপকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং এই সেক্টরে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার স্বার্থে একটি সাহসী ও কৌশলী উপায় অবলম্বন করতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের আইসিটি শিল্পকে পূর্ণ সম্ভাবনায় উন্মোচিত করার এখনই সময়। আশা করি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালিয়ে যাব আমরা, উৎসাহিত করব উদ্ভাবনাকে এবং বাংলাদেশিদের জন্য এক উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধতর ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করে যাব।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও

বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেড

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাবা-মেয়ের আবেগঘন মুহূর্ত ভাইরাল, মুগ্ধ নেটিজেনরা

ডাচদের বিপক্ষে জয়ে যে রেকর্ড গড়ল লিটনরা

সাকিবের রেকর্ডে ভাগ বসালেন লিটন

বিএনপিপন্থি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নতুন কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ

জয়ের কৃতিত্ব কাদের দিলেন লিটন?

চায়ের দোকানে আ.লীগ নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে যা বললেন তাসকিন

বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে জাপা অফিসে ভাঙচুর

প্রতিটি জেলা থেকে ট্যালেন্ট হান্ট চালু করবে বিএনপি : আমিনুল হক 

ফুল হয়ে ফোটে খাদ্য-অর্থের অভাব মেটাচ্ছে শাপলা

১০

এফইজেবি’র নতুন সভাপতি মোস্তফা কামাল, সম্পাদক হাসান হাফিজ

১১

নুরের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানালেন চিকিৎসকরা

১২

মন খারাপ হলে আমি একা একা কাঁদি: তানজিকা আমিন

১৩

বিএনপি নেতা মিল্টনের নেতৃত্বে সন্দ্বীপে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

১৪

নুরের খোঁজ নিলেন আমান উল্লাহ আমান

১৫

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে, টালবাহানা চলবে না : বাবলু

১৬

সংস্কার না হলে আমাদের পরিণতিও নুরের মতো হবে : হাসনাত

১৭

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকদের পুনর্বাসনের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে

১৮

২৮ বছর পর মা-বাবাকে ফিরে পেল সন্তান

১৯

মানুষের ভোট মানুষকে ফিরিয়ে দিতে চাই : টুকু

২০
X