মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০৩:০১ এএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ০৭:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে

উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে

দেশের অর্থনীতি যে ভালো নেই নানা বিবেচনা, মানদণ্ড ও সূচকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, গত দেড় দশকে অর্থনীতির বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জনও সম্ভব হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে অভূতপূর্ব। তবে দৈনিক কালবেলার এ-সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বিরাজমান সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভবপর না হলে তা যে মহাসংকটের রূপ নিতে পারে, সেই ইঙ্গিত যেমন স্পষ্ট; একই সঙ্গে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বার্তাও খোঁজা সম্ভব।

রোববার কালবেলায় প্রকাশিত ‘সব সূচকেই সতর্কবার্তা’ শীর্ষক প্রধান শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯-এর পর টানা ৯ বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশের বেশি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার ছুঁইছুঁই। দুই অঙ্কে শুরু হওয়া মূল্যস্ফীতি একপর্যায়ে সাড়ে ৫ শতাংশের নিচে নামে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থান ছিল সুসংহত। লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া না গেলেও রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের নেওয়া ঋণ জিডিপির তুলনায় ছিল সহনীয়। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যও ছিল স্বস্তিদায়ক। একমাত্র বিনিয়োগ পরিস্থিতি ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই ছিল ইতিবাচক অবস্থানে। সার্বিক অগ্রগতির প্রভাব হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) উদীয়মান অর্থনীতির তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ উঠে এসেছিল সবার ওপরে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস ও এসঅ্যান্ডপির ঋণমানেও ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও দুর্বলতা; দেখা দিয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ছন্দপতন, লক্ষ্য অনুযায়ী আসছে না রাজস্ব, বেড়ে চলেছে বাজেট ঘাটতি, ব্যাংকে বাড়ছে সরকারের দেনা। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে, রপ্তানিতে পড়েছে ভাটা, রিজার্ভের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না, থমকে গেছে বিনিয়োগ এবং ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে আইএমএফ। যেটুকু স্বস্তি, তা শুধু রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত পয়সায়। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেটের আকার যে মাত্রায় বেড়েছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আয় বাড়েনি। ফলে প্রতি বছরই ঘাটতি বেড়েছে। আর সেই ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে বাড়তি চাপ পড়েছে বাজেটের ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের ক্ষেত্রে। তা সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী গতিধারা। কিন্তু সে সময় সারা বিশ্বের মতো মহামারি করোনা আঘাত হানে দেশের অর্থনীতিতেও। তবে মহামারির পরও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অর্থনীতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্ট মন্দা বাংলাদেশকে আবার গ্রাস করে, যে সংকট আজও কাটেনি পুরোপুরি।

আমরা মনে করি, দুটো বিশ্বসংকট অবশ্যই চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে আমাদের অর্থনীতিকে—এটা যেমন ঠিক; একই সঙ্গে কিছু উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবতাবিবর্জিত নীতিও আজকের এ অবস্থার জন্য কম দায়ী নয়। পাশাপাশি দুর্নীতি, খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইনের শাসনের অভাবে বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ পাচার এ পরিস্থিতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, এটি সন্দেহাতীত। এখন এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার বিকল্প নেই। এজন্য সবার আগে দরকার দুর্নীতি, অর্থ পাচার রোধসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়া। পাচার অর্থ ফেরতের কার্যকর উদ্যোগসহ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নিজেদের সক্ষমতা অর্থাৎ আয়-ব্যয় বিবেচনায় যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কমানোসহ প্রয়োজনীয়-বাস্তবিক যা যা পদক্ষেপ দরকার সব নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে ফেরার পথে জাগপা সভাপতিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম

আদাবরে পুলিশের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা

নাটোরে ডা. আমিরুলকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি ড্যাবের

গাজীপুরের কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরানো হলো নাজমুল করিমকে

একাত্তরে ভুল করেছেন, এখনো ভুলের রাজনীতিতে আছেন : টুকু

দুই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার সাকিব ও সিকান্দারকে ‘এক’ করলেন জুলফিকার!

বিএনপিকে এনসিপির শুভেচ্ছা / ‘আমরা তর্কবিতর্ক করব কিন্তু পারস্পরিক সৌহার্দ্য থাকবে’

পুরো সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাস জানাল আবহাওয়া অফিস

নদীতে জাল ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা, জেলের মৃত্যু

ক্ষমা চাইলেন রিটকারীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া সেই শিক্ষার্থী

১০

আহত চবি শিক্ষার্থীদের দেখতে চমেকে শাহজাহান চৌধুরী

১১

জাঁকজমক আয়োজনে রুয়েটে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

১২

দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু

১৩

বাঁকখালী নদী উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু

১৪

আনাসসহ সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএফইউজে-ডিইউজের নিন্দা 

১৫

ক্যানসারে আক্রান্ত সাংবাদিক মেহেদী বাঁচতে চান

১৬

বুকে রড ঢুকিয়ে যুবককে হত্যা

১৭

মব সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে : বুলু

১৮

ইসরায়েলের তেলবাহী ট্যাংকারে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

১৯

নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে ওয়াসাকে আহ্বান চসিক মেয়রের

২০
X