সাফল্যের নেশায় চীন বিদেশি ফুটবলারদের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া ৩০ বছর বয়সী সার্জিনহো সে সুযোগেই দেশটিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। উদার নীতি অবশ্য সাফল্য দিতে পারেনি। এলিটা কিংসলের পর হামজা চৌধুরী—বাংলাদেশও সাফল্যের নেশায় বিদেশিদের দিকে ঝুঁকছে। লাল-সবুজদের এ নীতি কতটা কার্যকরী হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসার আগে বিদেশি ফুটবলার ইস্যুতে উদার নীতির দেশ চীনের সাম্প্রতিক রেকর্ড দেখে নেওয়া যাক। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চীনের দৌড় শেষ হয়েছে তৃতীয় রাউন্ডে এসে। কাতার বিশ্বকাপের বাছাইয়েও দেশটির দৌড় শেষ হয়েছিল তৃতীয় রাউন্ডে। গত বিশ্বকাপের টিকিট পেতে মরিয়া চীন পাঁচজন বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় নিয়েছিল। ২০১৯ সালে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের দলে নেওয়া শুরু করে দেশটি। সে সুযোগে ব্রাজিলিয়ান এলকেসন, ফার্নান্দো হেনরিক এবং অ্যালান কারভালহো চীনের জার্সি গায়ে তোলেন। এ ছাড়া লিভারপুলে জন্মগ্রহণকারী ইংল্যান্ড যুব দলের সাবেক খেলোয়াড় টাইয়াস ব্রাউনিং ও সাবেক আর্সেনাল মিডফিল্ডার এবং ইংল্যান্ড যুব দলে খেলা নিকো ইয়েনারিসকেও দলভুক্ত করেছিল দেশটি। ফল কিন্তু শূন্য। শুধু চীন নয়, বিদেশিদের মাধ্যমে সাফল্যের শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে কাতার-সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখকর হয়নি।
গত মাসে ভারতের বিপক্ষে হামজা চৌধুরীর অভিষেকের পর রীতিমতো বিদেশি ফুটবলারদের হাট বসাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিদেমি নির্ভরতা সাফল্যের শর্টকাট। টেকসই উন্নয়নের জন্য জেলা পর্যায়ের লিগে যত্নবান হওয়ার তাগিদ দিলেন সাবেক তারকা গোলাম সারোয়ার টিপু, ‘আমি যেটা বুঝি, প্রথমে জেলা পর্যায়ের লিগ সচল করতে হবে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ফুটবলারের খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে প্রতিভা উঠে আসবেই। হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। স্বল্প সময়ের মধ্যে হামজা দলের সঙ্গে মিশে গেছেন। তিনি উঁচু মানের খেলোয়াড়, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, সোহেল রানা-তপু বর্মণদের বয়স হচ্ছে। তাদের বিকল্প তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।’
কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের কমিটি জেলা পর্যায়ের ফুটবল নিয়ে চরম উদাসীন ছিল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটিতে থাকা প্রভাবশালীদের জেলায় লিগ না হওয়ার হাস্যকর দৃষ্টান্তও দেখা দেখা গেছে বিগত দিনে। তাবিথ এম আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ফুটবল প্রশাসন এ জায়গায় কতটুকু কী করতে পারে সময়ই বলবে। আপাতত কিন্তু সালাহউদ্দিন ও তাবিথ প্রশাসনের মাঝে খুব বেশি তফাৎ লক্ষ করা যাচ্ছে না!
দেশের ফুটবলকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে হলে তৃণমূলের পরিকল্পনা সাজানোর বিকল্প দেখছেন না গোলাম সারোয়ার টিপু। ৮১ বছর বয়সী সাবেক এ তারকার কথায়, ‘এক হামজাকে দিয়ে হবে না। কারণ এটা টেনিস কিংবা ব্যাডমিন্টন নয় যে, গোটা দেশকে একজনই টেনে নিয়ে যাবেন। শুধু একাডেমিক কার্যক্রম দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবে না। কারণ একাডেমিতে আপনি
৪০-৫০ কিংবা ৮০ জনকে পরিচর্যা করবেন। প্রতিভাবান ফুটবলার পেতে হলে আপনাকে তৃণমূলে যেতে হবে। সেটা করতে পারলে প্রতিভাবান ফুটবলারের অভাব থাকবে না।’
কিন্তু তৃণমূল কার্যক্রমে আদৌ গতি আসবে কি না—এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সাধারণ পরিষদ সদস্য হিসেবে জেলার সংগঠকরা বাফুফে নির্বাচনে যে তৎপরতা দেখান, ঠিক উল্টো চিত্র লক্ষ করা যায় জেলায় লিগ আয়োজনের বেলায়। তাবিথ আওয়াল প্রশাসনের জেলা লিগ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক ফুটবলার ইকবাল হোসেনকে। জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার হুঙ্কার দিয়েছেন, জেলা লিগ আয়োজন না করলে শাস্তি অবধারিত। ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ১০ জেলায় লিগ চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা লিগ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান। বাস্তবতা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির পর মার্চ মাসও পেরিয়ে গেছে; কোনো জেলার লিগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় রসদের প্রতি যত্নবান না হয়ে চীনের মতো বিদেমি নির্ভরতায় কতটুকু সাফল্য পাওয়া যাবে—উত্তরের জন্য সময়ের অপেক্ষা।
মন্তব্য করুন