একটা সময় ছিল, যখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ছিল সমীহ জাগানো দল। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। ওপেন করতেন তামিম ইকবালের মতো ব্যাটার। ছিলেন সাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ডার। উইকেটের পেছনে শুধু নয়, ব্যাট হাতেও মিডল অর্ডারের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন মুশফিকুর রহিম। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যাদের নাম লেখা হলো, তাদের কেউ এখন নেই বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে। একদা সমীহ জাগানো সেই দলের গৌরবও অন্তহীন। এখন বাংলাদেশ ৫০ ওভার ব্যাট করতে হিমশিম খায়। টাইগার এখন প্রতিপক্ষের সামনে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে একটিতেও ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি বাংলাদেশ। যারা টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল, তারাই ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এমন ক্রিকেট খেলেছে যে দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজের দল শিক্ষানবিশ কি না! সর্বশেষ ১০ ওয়ানডের মাত্র দুটি ম্যাচে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ধরনই বলে দেয় সমস্যা কত গভীর। অগভীর ব্যাটিং, মানহীন বোলিং আর দক্ষ অলরাউন্ডার ছাড়া এখন আর ওয়ানডে খেলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ দলে আগে সাকিব ছিলেন। এখন মিরাজ আছেন বটে। তবে তিনি তো আর সাকিব নন। তা ছাড়া যে দলের ছয়জন ভালো ব্যাটার থাকার কথা, সেই দলে যদি আড়াই জন ব্যাটারও না থাকে, তাদের পক্ষে ওয়ানডে খেলা অসম্ভব। শেষ ম্যাচে তাই ২৯৩ রান তাড়া করতে নেমে ২৭.১ ওভারে ৯৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও তারা ২৮.৩ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট হয়েছিল। শুধু এ দুই ম্যাচেই নয়, সম্প্রতিক সময়ে এমন বিপর্যয় হরহামেশাই ঘটছে। তাই সিরিজ হারের পর মিরাজ পরের ম্যাচ ভালো খেলার অজুহাতে মুখ লুকাচ্ছেন, ‘আমাদের অনেক ভুল ছিল। রান করতে পারিনি। আমাদের কাছে সুযোগ এসেছে, কিন্তু ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারিনি। দলের সবাই এটা মেনে নিয়েছে আমরা ভালো খেলিনি। তাদের খুব ভালো বোলিং আক্রমণ ছিল। কিন্তু আমাদের তা সামলানো উচিত ছিল।’ ২০২৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি সুযোগ পাবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরাজ বলেন, ‘আমরা কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে চিন্তিত। যদি আমরা রান না করি, জিততে পারব না। আমাদের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের রান করতে হবে। কীভাবে পরের সিরিজে ভালো করা যায়, এটা নিয়ে আমরা ভাবছি।’ কিন্তু পরের সিরিজ তো আর রাতারাতি ভালো হবে না। চাপের মুখে বড় জুটি গড়া ব্যাটার লাগবে। দরকার হবে একাধিক মানসম্পন্ন অলরাউন্ডার। লাগবে ওপেনিংয়ে ধারাবাহিকতা। এর কোনো একটি সমস্যাও কি চটজলদি সমাধান হওয়ার মতো। উত্তর যদি না হয়, তাহলে এখন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের সামনে সেরা ৯-এ যেতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। আর সামনের ২৩ ম্যাচে তারা যদি সেরা ৯-এ না ঢুকতে পারে, তাহলে কিন্তু সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে না।
মন্তব্য করুন