সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপ ক্রিকেটে মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল আচরণ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা, কিন্তু এবার সেটি ছুঁয়েছিল অন্য মাত্রা—বিশেষত ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের করমর্দন এড়িয়ে চলা নিয়ে। তিনটি ম্যাচেই পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি তিনি, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জন্ম দেয় ক্রীড়া-আচরণের বড় প্রশ্ন। এরপর নারী বিশ্বকাপেও দেখা যায় একই চিত্র।
তবে ঠিক সেই সময়, অন্য এক মাঠে—হকিতে—ঘটল এক সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য। একই দুই দেশের খেলোয়াড়রা দেখালেন, ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা আসলে কেমন হওয়া উচিত।
মালয়েশিয়ার জোহরে চলমান সুলতান অব জোহর কাপ, অনূর্ধ্ব-২১ হকি টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। জাতীয় সংগীত শেষে মাঠে নামার আগে দুই দলের তরুণ খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে হাসিমুখে ‘হাই-ফাইভ’ বিনিময় করেন। সেই মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো। ক্রিকেট মাঠে যেখানে শীতলতা, সেখানে হকিতে এই উষ্ণতা—দর্শকরা তাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দুই দলকেই।
খেলাটিও ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। প্রথম পাঁচ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় পাকিস্তান, পরে ৩৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে। তবে শেষদিকে দারুণ ঘুরে দাঁড়ায় ভারত—৫৩ মিনিটে টানা তিন গোল করে এগিয়ে যায় ৩-২ ব্যবধানে। কিন্তু ৫৫ মিনিটে সমতা ফেরায় পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর ৩–৩ ড্র-তে শেষ হয় ম্যাচটি।
ম্যাচের আগে পাকিস্তান হকি ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানিয়েছিলেন, খেলোয়াড়দের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, ভারতীয়রা করমর্দন এড়িয়ে গেলেও যেন তারা প্রতিক্রিয়া না দেখায়—শান্তভাবে খেলে যাক। কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো—খেলোয়াড়দের হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সেই দৃশ্যই এখন হয়ে উঠেছে সৌহার্দ্যের প্রতীক।
ক্রিকেট মাঠে যেখানে বিতর্ক, সেখানে হকির মাঠে বন্ধুত্বের বার্তা—এই বৈপরীত্যই যেন মনে করিয়ে দিল, খেলার সৌন্দর্য আসলে মানবিকতা আর সম্মানেই নিহিত।
মন্তব্য করুন