জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু না হলেও মিরপুরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি, ফারজানা হক পিংকি ও শারমিন আক্তার সুপ্তারা। ভারত সিরিজের আগে ব্যাটিং কোচের সঙ্গে ব্যাটে শান দিয়ে নিয়েছেন তারা। গত তিন দিনই মিরপুরে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন তারা। সিরিজ সামনে রেখে গতকাল প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০ সদস্যের এ দলে জায়গা হয়নি অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম ও অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের। তবে ফিরেছেন সালমা খাতুন ও শারমিন আক্তার।
পুরুষ ক্রিকেটের মতোই নারী ক্রিকেটেও দেখা যাচ্ছে ‘যাও পুরাতন’ পলিসি। নতুনদের জায়গা করে দিতে ধীরে ধীরে দল থেকে বাদ পড়ছেন অভিজ্ঞরা (পুরোনোরা)। সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজেই দেখা মিলেছে তা। তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি কেউ। বিশেষ করে প্রথমবার নারী দলের দায়িত্ব পাওয়া দুই নির্বাচক তো মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন। এখনই দল নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না তারা। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের একাধিক সূত্র জানায়, জাহানারা-রুমানাদের বাদ পড়ার কারণ পারফরম্যান্স, বয়স ও ফিটনেস।
ফিটনেস উন্নতি করলেও পারফরম্যান্সের জন্য বাদ পড়েছেন জাহানারা। শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ওয়ানডেতে বোলিংয়ে রান খরচে বেশ উদার ছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ৬ ওভারে দেন ৩৫ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে সমানসংখ্যক ওভারে দেন ৪৭; নেন মাত্র ২ উইকেট। ৩০ বছর বয়সী এ পেসারের উইকেট শিকারেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও পারফরম্যান্সে উন্নতি করতে পারেননি তিনি। আবাহনীর হয়ে সাত ম্যাচে নেন ৭ উইকেট—তার বাদ পড়ার কারণও পারফরম্যান্সে ঘাটতি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকের পারফরম্যান্সকে বিবেচনা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
জানাহারার বাদ পড়াটা পারফরম্যান্সের জন্য বলা হলেও রুমানারটা ভিন্ন। শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই দলের সঙ্গে নেই এ স্পিন অলরাউন্ডার। সাম্প্রতিক প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটিংয়ে ৩৬.৪০ গড়ে করেন ১৮২ রান, বোলিংয়ে ২.৭০ ইকোনমিতে নেন ১১ উইকেট। তারপরও ভারত সিরিজের দলে না থাকা নিশ্চিতভাবে মেনে নিতে পারবেন না ৩২ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার। যদিও এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে চাননি তিনি। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্র বলছে, রুমানার বাদ পড়ার একটা কারণ বয়স ও ফিটনেস। সূত্র জানায়, ‘এখানে নতুনদের দেখা হচ্ছে, কিছু ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে; মূলত বয়স ও ফিটনেসকে মাথায় রেখেই দল সাজানো হয়েছে।’
ফিটনেসের ঘাটতির জন্য বেশ কিছু ম্যাচে অতিরিক্ত রানের চাপে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। জেতার সুযোগ থাকলেও ফিল্ডিংয়ের ঘাটতিতে হারতে হয়েছে কয়েকবার। কয়েকটি সিরিজে এমনটাই চোখে পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের, ‘আমাদের বেশিরভাগ পরাজয় এসেছে ফিল্ডিংয়ের কারণে, অতিরিক্ত ৩০ রানের মতো হয়েছে। আমরা গত কয়েকটি সিরিজের মধ্যে আরও কিছু ম্যাচ জিততে পারতাম। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের কারণে সেটা হয়নি।’ শুধু পারফরম্যান্স, বয়স ও ফিটনেসই নয়; ভবিষ্যতের দল গঠনেও মনোযোগ দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট, ‘তোমাকে নতুন ক্রিকেটার নিতে হবে, সামনের বছর বিশ্বকাপ (টি-টোয়েন্টি) আছে, তাই না?’ আরেকটি সূত্র বলেছে, ‘২০২৫ বিশ্বকাপের চিন্তা করে দল তৈরির চেষ্টা করছে বোর্ড। অভিজ্ঞদের বাদ দিলেই বাংলাদেশে ফেসবুকে সমালোচনা হয়। এক্ষেত্রেও এমন কিছু হতে পারে। তবে এটাকে স্পোর্টিং হিসেবেই দেখতে হবে। কিছু ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় বাধ্য হয়েই, তখন সমালোচনা হতেই পারে।’ টিম ম্যানেজমেন্টের কথায় স্পষ্ট, নারী ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে ‘যাও পুরাতন’ পলিসি মেনেই এগোতে যাচ্ছে বোর্ড।
মন্তব্য করুন