কিশোর ইয়াসিন আরাফাতের মাঝে অপার সম্ভাবনা ছিল বলেই চুক্তিতে ২ লাখ ডলার রিলিজ ক্লজ জুড়ে দিয়েছিল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। সম্ভাবনার ফুল ফোটার আগেই তা ঝরে না পড়লেও পাপড়িগুলো কেমন শুকিয়ে গেছে। আরাফাতের খেলায় ঘটেছে ছন্দপতন। তাই সময়ের সেরা তো বটেই, পরিপূর্ণ ফুলব্যাক এখন জাতীয় দলের বাইরে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
ব্যর্থতা থেকে ঝেড়ে উঠে দাঁড়ানোর পথে দেশের ফুটবল। এমন একটা সময় ইয়াসিন আরাফাত দলের বাইরে! আশার কথা, ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চাচ্ছেন জাতীয় দলের বিভিন্ন পজিশনে ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার মিছিলে শামিল হোন এ ফুলব্যাক। যাকে নিয়ে আলোচনা, সেই ইয়াসিন আরাফাতও জাতীয় দলে স্থান ফিরে পেতে মরিয়া।
দ্রুত আক্রমণে ওঠা, প্রতিপক্ষের গোলমুখে নিখুঁত ক্রস বাড়ানো, দলের প্রয়োজনে গোল করা, আক্রমণে রসদ জোগানোর পর দ্রুত রক্ষণে নেমে আসা—ইয়াসিন আরাফাতের গুণের শেষ নেই। তাকে ‘কমপ্লিট ফুলব্যাক’ হিসেবে উল্লেখ করলেন কোচ মাসুদ পারভেজ কায়সার, যিনি জাতীয় দলে এ ফুটবলারকে নিয়ে কাজ করেছেন। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফর্টিজ এফসির প্রধান কোচ মাসুদ পারভেজ কায়সার বলেন, ‘সর্বশেষ আমি যখন ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন ফিটনেস জটিলতা ছিল। আমরা দ্রুত সে জটিলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। জাতীয় দলের বিভিন্ন পজিশনে এখন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। ইয়াসিন কীভাবে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেবেন, সেটা কিন্তু তার ওপরই নির্ভর করছে।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে উঠে আসা ইয়াসিন আরাফাতের ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু আরামবাগ ফুটবল একাডেমিতে। ২০১৬ সালে দলটিকে পাইওনিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন করান। পরবর্তী সময়ে কদমতলা সংসদ হয়ে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে আসেন। সাইফ স্পোর্টিংয়ে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫২ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম আবাহনীকে শেখ কামাল ক্লাব কাপে রানার্সআপ করানোর পথে পাঁচ ম্যাচে ১ গোল করেন। দুই মৌসুমে লিগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ৩৩ ম্যাচে ৪ গোল করেছেন। গত মৌসুমে খেলেছেন ১৫ ম্যাচ। ৮ ম্যাচে একাদশে ছিলেন, বাকি ৭ ম্যাচ খেলেছেন বদলি হিসেবে। তার আগের মৌসুমে ১৮ ম্যাচ খেলেছেন, যার ১৫টিতে একাদশে ছিলেন। চলতি মৌসুমে স্বাধীনতা কাপে বসুন্ধরা কিংসের দুই ম্যাচের পুরোটা সময় খেলেছেন।
ইয়াসিন আরাফাতের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন বলছিলেন, ‘দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত। ক্যাবরেরার মতো আমিও চাই বিভিন্ন পজিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পাক; কিন্তু দলে জায়গা পেতে হলে আপনাকে ক্লাব দলে নিয়মিত খেলতে হবে। ইয়াসিন আরাফাত দলে এলে লেফটব্যাক পজিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পাবে। এটা আমাদের জন্যও ইতিবাচক।’
ক্লাব দলে গেম টাইম বাড়িয়ে জাতীয় দলে দ্রুতই ফিরতে চান ইয়াসিন আরাফাত। ২০ বছর বয়সী এ ফুলব্যাক বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে লড়াইয়ের জন্য আমি প্রস্তুত। ক্লাব দলে গেম টাইম বাড়াতে চাই। এভাবে জাতীয় দলেও জায়গা ফিরে পেতে চাই।’ বসুন্ধরা কিংসে লেফটব্যাক পজিশনে সাদ উদ্দিন, রিমন হোসেন ও তারেক কাজীও খেলতে সক্ষম। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন জাতীয় দলের জার্সিতে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র গোল করা ইয়াসিন আরাফাত।